নিউজনেস্ট

সৌদির ইসরায়েলপ্রেম: কয়েক দশকের গোপন উপাখ্যান

ছবি : কোলাজ

সম্প্রতি ইসরায়েলি সংবাদপত্র ‘হায়োমের’একটি প্রতিবেদনে ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্কের ইতিহাসের উপর আলোকপাত করা হয়।  প্রতিবেদনে বলা হয় যে, পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা এবং সাধারণ হুমকি মোকাবিলার জন্য এই দুটি দেশ বহু বছর ধরে গোপনে সহযোগিতা করে আসছে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জনসম্মুখে দুই দেশকে শত্রু মনে হলেও বাস্তবিকপক্ষে পর্দার আড়ালে তারা বহু বছর ধরে পরস্পরের সহযোগী। দুই দেশের মধ্যে সীমানা, মূল্যবোধ বা সংস্কৃতির ভাগাভাগি না থাকলেও পারস্পরিক রাজনৈতিক ও স্বার্থকেন্দ্রিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে তারা বেশ পারঙ্গম।

সম্পর্ক তৈরির প্রেক্ষাপট

প্রতিবেদনটির বর্ণনা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণার সময় থেকে শুরু হয়।  প্রথম ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেনগুরিয়ন তখন কূটনৈতিক মিত্রের সন্ধানে ছিলেন এবং সৌদি আরবকে সম্ভাব্য মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছিলেন। সেই সময়ে সৌদি ছিল এমন এক দেশ যারা মধ্যপ্রাচ্যে অন্যান্য আরব দেশগুলিকে বড় ধরনের ক্ষমতা পেতে দিতে চাইত না। ফলে ইসরায়েলের মতো দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৌদির উল্লেখিত স্বার্থরক্ষায় সহায়ক হয়।

গোপন সম্পর্কের সূচনা

প্রতিবেদন অনুসারে, দুই দেশের মধ্যে গোপন সম্পর্কের প্রথম লক্ষণ দেখা যায় ষাটের দশকের শুরুতে, যখন ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সৌদি আরব তখন নিঃশব্দে ইসরায়েলি বিমানের জন্য তার আকাশসীমা খুলে দেয়। যাতে ইসরাইলিরা ইয়ামের গৃহযুদ্ধকে উসকে দিতে পারে।

ইসরায়েল আউট নীতি বনাম পর্দার আড়ালের সম্পর্ক

১৯৬৭ সালে সমগ্র আরবলীগ ‘ইসরায়েল আউট’ নীতি গ্রহণ করে— ইসরায়েলের সাথে সমঝোতা নেই, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি নেই এবং ইসরায়েলের সাথে কোনো আলোচনা নয়। কিন্তু পর্দার আড়ালে তখন চলছিল ইসরায়েলের সাথে সৌদির কূটনৈতিক সেতু নির্মাণের কাজ, ফলাফলস্বরূপ তখন ইসরায়েল সৌদি সরকারকে উৎখাতের স্থানীয় প্রচেষ্টা সম্পর্কে সৌদি রাজপরিবারকে তথ্য প্রেরণ করে এবং জর্ডানের রাজাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সৌদিকে সতর্ক করে।

সৌদি বাস্তববাদ

বাস্তববাদের জন্য পরিচিত সৌদিরা বুঝতে পেরেছিল যে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে থাকার জন্যই আসছে। সংবাদপত্র অনুসারে, সৌদি রাজা ১৯৭৭ সালে স্বীকার করেছিলেন যে, ‘কেউ আর ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে না।’

মাদ্রিদ শান্তি সম্মেলন

উপসাগরীয় যুদ্ধের পরে মাদ্রিদ শান্তি সম্মেলনে সৌদি আরব এবং ইসরায়েল প্রথমবারের মতো একই টেবিলে বসেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌথ প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন চেয়েছিল আরব-ইসরাইল সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে । সম্মেলনে কোনো শান্তি চুক্তি না হলেও সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ ছিল এবং বন্ধ দরজার আড়ালে দুই পক্ষই যৌথ প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।

ইরানবিরোধী জোট

২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধ প্রকাশ করে দেয়, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি আছে। এ বিষয়টি  সৌদি আরব এবং ইসরায়েল উভয়কেই একই বিপদের মুখোমুখি করেছিল।  এটা মাথায় রেখে অবশেষে দুই দেশ ইরানবিরোধী জোট গঠনের লক্ষ্যে টেবিলে বসে। উদ্দেশ্য ছিলো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের  প্রভাব শূন্যে নামিয়ে আনা।

ইব্রাহিম চুক্তি

সাল ২০২০।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে সাক্ষর করে ,যাতে অংশগ্রহণ করে সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী দুটি রাষ্ট্র—সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। সৌদিরা যদিও এই চুক্তির অংশ ছিল না, তবুও এই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল যে, তারা ফিলিস্তিনিদের সাথে সমস্যা সমাধানের পরে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।

এতটুকু পর্যন্ত মোটামুটি হলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলের ব্যাপারে সৌদির মনোভাব অনমনীয় ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে সৌদি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যে, তারা ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইচ্ছুক। শুরু হয় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া। আর ঠিক তখনি দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় ৭ অক্টোবরের তুফানুল আকসা। যার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় শুরু হয় ইসরায়েলের আগ্রাসন। ভেস্তে যায় কয়েক যুগ ধরে চলা সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া। অনিশ্চিত হয়ে যায় সৌদি ইসরায়েলের কূটনীতির ভবিষ্যৎ।

সূত্র : আল হুররাহ নিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত