নিউজনেস্ট

কেমন ছিল বিধর্মীদের সাথে রাসূল সা. এর আচরণ

কেমন ছিল বিধর্মীদের সাথে রাসূল সা. এর আচরণ
ছবি: সংগৃহীত

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল মুসলমানদেরই নবী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন গোটা মানবজাতির নবী। তাঁর জীবন ও আচরণে কেবল মানবতা, সহানুভূতি এবং সংবেদনশীলতার উজ্জ্বল উদাহরণই পাওয়া যায়। বিধর্মীদের সাথে তাঁর আচরণে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। আসুন সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই কেমন ছিল বিধর্মীদের সাথে রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ।

বিধর্মীদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধর্মী কুরাইশদের ইসলামের দাওয়াত দেন। তাদের কুফরী ও অবাধ্যতা এবং বিভিন্নভাবে কষ্ট দেওয়া সত্ত্বেও তিনি বারবার তাদের দুয়ারে দুয়ারে ইসলামের সুমহান বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার আদেশে সর্বপ্রথম তিনি নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত দেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“আপনি আপনার নিকট আত্মীয়দের সতর্ক করুন।” -সুরা আশশুয়ারা (আয়াত: ২১৪)

এ আয়াত নাজিলের পর তিনি পরিবারের অনেককে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। কিন্তু তা ছিলো গোপনে, লোকচক্ষুর আড়ালে। এরপর আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে আয়াত নাজিল করে বলেন,

“আপনাকে যা আদেশ দেওয়া হয়েছে তা ঘোষণা করুন।” -সুরা আলহিজর (আয়াত: ৯৪)

এই আয়াত নাজিলের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ে উঠে নিজ গোত্র কুরাইশদের একত্রিত করে সুমহান ইসলামের দাওয়াত দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে এতটা কষ্ট পান এবং তাদের দাওয়াত কবুল না করার কারণে এমনভাবে ভেঙে পড়েন যে, অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সান্ত্বনাস্বরূপ আয়াত নাজিল করে বলেন:

“আপনি কি নিজেকে শেষ করে দেবেন এটা ভেবে যে তারা ঈমান গ্রহণ করছে না?” -সুরা আশশুয়ারা (আয়াত: ৩)

বিধর্মীদের মাঝে রাসূলের সা. এর দাওয়াতি কৌশল

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধর্মী কুরাইশদের, উত্তম কথা, ধৈর্য, উপদেশের মাধ্যমে ইসলামের সত্যতা তুলে ধরেন। ফলে তারা অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“তোমার রবের পথে ডাকো প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের সাথে। এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো উত্তমভাবে। নিশ্চয় তোমার রব ভালো জানেন, কে তার পথ থেকে বিচ্যুত। এবং আমি তাদের ভালো করেই জানি যারা সৎপথে আছে।” -সুরা আননাহল (আয়াত: ১২৫)

দাওয়াতের পথে ধৈর্য ও অবিচলতা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের দেওয়া বিভিন্ন কষ্ট ও নিপীড়ন সহ্য করেছেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেওয়ার ফলে কাফেরদের ধ্বংস করার জন্য যখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা পাঠিয়েছিলেন, তখনও তিনি তাদের জন্য ধ্বংসের পরিবর্তে হেদায়েতের দোয়া করলেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো ছিলেন সবার জন্য রহমতস্বরূপ।

বিধর্মীদের সাথে অঙ্গীকার পূরণ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অঙ্গীকার ও চুক্তির পূরণ সম্পর্কে আরব-অনারব সকলের কাছেই স্পষ্ট বিষয় ছিল। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে বলেছিলেন:

“আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সে (রাসূল সা.) কি বিশ্বাসঘাতকতা করে? আপনি দাবি করেছেন যে, তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেন না। এবং আল্লাহর রাসূলদের রীতি এটাই, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেন না।” হুদায়বিয়ার সন্ধিতে কুরাইশদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন এবং আবু জান্দালকে কুরাইশদের কাছে ফিরিয়ে দেন।

বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার কারণে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধর্মীদের ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী ছিলেন। তাই তিনি তাদের সাথে কথাবার্তা এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে নম্র ছিলেন। তবে তারা যদি বিশ্বাসঘাতকতা করত, তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন। তিনি খন্দকের যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বনু কুরাইযার সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। রোমানদের সাথে এবং বনু নাজিরের ইহুদীদের সাথেও যুদ্ধ করেছিলেন যখন তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।

দয়া ও ক্ষমা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধর্মীদের সাথে তাঁর আচরণে ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন। তবে যারা তাঁকে নিয়ে কটুক্তি করেছিল, তারা সাধারণ ক্ষমার বাহিরে ছিল। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিল হাজার হাজার সৈন্য। কিন্তু তিনি মক্কাবাসীদের হত্যা করেননি। তাদের রক্তপাত করেননি। বরং তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমি তোমাদের সাথে কী আচরণ করব?”

তারা বলল, অবশ্যই “আপনি একজন ভাই হিসেবে উদার ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং একজন ভাতিজা হিসেবেও উদার।”

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তোমরা সবাই মুক্ত।”

এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিধর্মীদের সাথে দয়া, ক্ষমা ও সহিষ্ণু উদারতার এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেন। যাতে আমাদের জন্য রয়েছে উত্তম উপদেশ এবং মহান শিক্ষা।

সূত্র: অ্যারাবিক ওয়েবসাইট আলমাউদু

নুর মোহাম্মাদ
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত