চলমান গাজা যুদ্ধের মধ্যেও ইসরায়েলের ধর্মীয় আদালত রাবিনেটের ভোগ্যপণ্য অনুমতি প্রদানবিষয়ক অধিদপ্তর কোশার এর লাইসেন্সপ্রাপ্ত যে সকল আরব কোম্পানি দখলদার ইসরায়েলকে ধারাবাহিকভাবে পণ্য রপ্তানি করে আসছে। তাদের একটি বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় আরবি সংবাদমাধ্যম কুদস চ্যানেল। প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে এই লেখা প্রস্তুত করা হয়েছে।
তালিকার প্রথমেই আছে মিসরের নাম। চলমান গাজা যুদ্ধের মধ্যেও গত মে মাসে ইসরায়েল থেকে মিশরের রপ্তানি আয় বেড়ে ২৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যা দুই হাজার তেইশ সালের মে মাসের রপ্তানি আয়ের দ্বিগুণ।
উল্লেখ্য,ইসরায়েলে মিশরের রপ্তানি হওয়া পণ্যের সংখ্যা ২০৬ টি এবং ইসরায়েলে রপ্তানিকারক মিশরিয় কোম্পানির সংখ্যা সাঁইত্রিশটি। এর মধ্যে ১২ টি পণ্য উৎপাদন করা ফারাজুল্লাহ কোম্পানি ৪০টি পণ্য উৎপাদন করা এগ্রো গ্রিন কোম্পানি এবং ৩ টি পণ্য উৎপাদন করা ওক গ্রুপ ইসরায়েলে নিয়মিত পণ্য রপ্তানি করে থাকে।
ইসরায়েলে মিশরের রপ্তানিকৃত পণ্যগুলো হচ্ছে, ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিঙ্কস, প্রক্রিয়াজাত পেয়ারার জুসসহ স্ট্রবেরি, ঢেঁড়স, এবং আর্টিচোক শাক।
তালিকায় এর পরের অবস্থানেই আছে মরক্কো। মরক্কো থেকে ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানি করে এমন কোম্পানি মোট পঁচিশটি। এসকল কোম্পানি থেকে ইসরায়েলে প্রতি বছর ১০৬ ধরণের পণ্য রপ্তানি করে থাকে মরক্কো। ইসরায়েলে রপ্তানিকারক মরক্কোর ২৫ কোম্পানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলো হলো—১৯ টি পণ্য উৎপাদন করা নাজদ এ্যান্ড উলদে আব্বাস কৃষি সমবায় কোম্পানি, ২৬ টি পণ্য উৎপাদন করা ট্যালক্রপ কোম্পানি, ২ টি পণ্যের উৎপাদক সুক্কার কনজ্যুমার লিমিটেড, ১৫ পণ্য উৎপাদন করা রিও ডি ওরো কোম্পানি।
উল্লেখ্য, মরক্কো প্রতি বছর ইসরায়েলে জলপাই, জলপাই তৈল, মশলা, প্যাকেটজাত পেস্ট্রি, টিনজাত মাছসহ খাদ্যশষ্যের বীজ, টমেটো সস ও জনপ্রিয় আরবি খাবার হারিসা রপ্তানি করে থাকে।
তালিকার তৃতীয় অবস্থানটি আরব আমিরাতের। ইসরায়েলে রপ্তানি হওয়া আমিরাতি পণ্যের শতক হাঁকাতে দরকার আর মাত্র একটি পণ্য। আরব আমিরাত থেকে ইসরায়েলে রপ্তানিকারক কোম্পানির সংখ্যা বিদেশী ও আমিরাতি মিলিয়ে ১১ টি। এরমধ্যে আবার ৭টি বিদেশী কোম্পানির আরব আমিরাতে শাখা রয়েছে। অপরদিকে বাকি চার আমিরাতি কোম্পানিরও আছে কারখানা। আরব আমিরাত প্রতি বছর ইসরায়েলে খেজুর, চা, আলুর চিপস রপ্তানি করে থাকে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ইসরায়েলে আমিরাতের রপ্তানি আয় ২৩৮ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৪২ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে জর্ডান। চলতি বছরে ইসরায়েলে করা রপ্তানি থেকে জর্ডানের আয় হয়েছে ৩৫.৭ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছর ছিল ৩২.৩ মিলিয়ন ডলার। ইসরায়েলে রপ্তানিকারক জর্ডানিয়ান কোম্পানির সংখ্যা ১৯ টি এবং ইসরায়েলে রপ্তানিকৃত পণ্যের সংখ্যা ৫টি। ইসরায়েলে জর্ডানের রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে— মিষ্টান্ন, পাস্তা, এ্যালকোহলিক পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত ভুট্টা ফ্লেভার। ইসরায়েলে রপ্তানি করা ১৯ জর্ডানি কোম্পানির ভিতর উল্লেখযোগ্য কোম্পানি হল হাজ্জা ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ, সার্জিও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি এবং জেনারেল ইভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (জিআইসি) তালিকার পঞ্চম স্থানে আছে মক্কা।
ইসরায়েলে রপ্তানিকারক আরব দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে পবিত্র মক্কা মদিনার ভূমি সৌদি আরবও। ইসরায়েলে রপ্তানি করা তাদের দুররাহ নামে একটি কোম্পানি রয়েছে। যারা ইসরায়েলে সাদা চিনি রপ্তানি করে থাকে।
তালিকার সর্বশেষ স্থানে থাকা দেশটির নাম হচ্ছে তিউনিসিয়া। মুনা ফুড নামে তিউনিসিয়ার একটি কোম্পানি আছে যারা ইসরায়েলে জনপ্রিয় আরবি খাবার হারিসা ও প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটজাত সালাদ রপ্তানি করে থাকে।
সেইসাথে ইসরায়েলে রপ্তানিকারক অন্যান্য অনারব মুসলিম রাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোরও তালিকা প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় এ্যারাবিক সংবাদ মাধ্যম কুদস নিউজ চ্যানেল।
উক্ত তালিকায় সবার প্রথমে আছে তুরস্কের অবস্থান। ইসরায়েলে রপ্তানি করা তুর্কি পণ্যের সংখ্যা ২৭৭২ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকৃত পণ্যগুলো হল টিনজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত টিনজাত মাছ, মিনারেল ওয়াটার, মিষ্টান্ন দ্রব্য, আচার। ইসরায়েলে রপ্তানিকারক তুর্কি কোম্পানির সংখ্যা ২৯০।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে, উল্কার কোম্পানি, উলুদাগ কোম্পানি, ইকার কোম্পানি এবং দুবাইয়ের সাথে সংযুক্ত কোম্পানি তুর্কি আলপাইন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলকে তুরস্কের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরে এই কোম্পানিগুলোর ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানি করার ব্যপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
তালিকার দ্বিতীয়তে রয়েছে মালয়শিয়ার নাম। ইসরায়েলে মালয়েশিয়ার রপ্তানিকারক কোম্পানির সংখ্যা ১২টি এবং রপ্তানিকারক পণ্যের সংখ্যা ৩৬টি।উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকৃত পণ্যগুলো হচ্ছে কফি, ভুট্টা, চকোলেট। উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকারক মালয়েশিয়ান কোম্পানি হচ্ছে— এআইসি চিয়ং বেভারেজ কোম্পানি, জেবি কোকা এসডিএন কোম্পানি, এসডিএন বিএইচডি ডেইলি ফ্রেশ ফুড কোম্পানি।
তালিকার সবার শেষে আছে পাকিস্তানের নাম। ইসরায়েলে রপ্তানি করা তাদের পণ্য সংখ্যা ২৭টি এবং ইসরায়েলে রপ্তানিকারক কোম্পানি হচ্ছে ৪টি। কোম্পানির নাম গুলো হলো ইত্তেফাক সল্ট কোম্পানি ,বিআইভিএ জিএমবিএইচ কোম্পানি, এবং গুজরানওয়ালা ফুড ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড। ইসরায়েলে রপ্তানিকৃত উল্লেখযোগ্য পাকিস্তানি পণ্য হচ্ছে মিছরি,লবণ এবং এক ধরণের বিশেষ খনিজ লবণ হিসেবে পরিচিত হিমালয়ান লবণ।
সূত্র : কুদস নেটওয়ার্ক