পৃথিবীজুড়ে মুসলিম শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে কয়েক দশক ধরে। ফিলিস্তিন, গাজা, সিরিয়াসহ পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলোতে কিভাবে মুসলিম শিশুদের জীবনকে—দুর্বিষহ করে ফেলা হয়েছে আজকের এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে চলুন একটু নজর বুলিয়ে আসি ৷
গত জুনের ৪ তারিখে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক শিশুহত্যা দিবস পালন করেছে৷ কিভাবে যুদ্ধকবলিত দেশের শিশুরা জীবন কাটায়, তাদের খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক দুর্বলতা, স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন রোগবালাই—এসব বিষয় ছিলো আলোচনার কেন্দ্রে।
গাজার শিশুরা
গত অক্টোবরের ৭ তারিখ থেকে গাজা যুদ্ধে বর্বর ইসরায়েল এ পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে ৷ হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে শহিদ হয়েছে প্রায় ২৮ জন৷ পাশাপাশি ৮ লক্ষ ১৬ হাজার শিশুর প্রয়োজন বিশেষ মানসিক সাপোর্টের। কারণ ইসরায়েলি বর্বরতার কালো রাতের দুঃসহ স্মৃতি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিপর্যস্ত করেছে ভীষণভাবে।
সিরিয়ার শিশুরা
সিরিয়ার কসাই বাশার আল আসাদ ২০১১ এর মার্চ থেকে নিয়ে ২০২৩ এর মার্চ পর্যন্ত অন্তত ২২ হাজার ৯৮১ জন শিশুকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ১৯০ জনকে হত্যা করা হয়েছে নির্মম শাস্তির মাধ্যমে। পাশাপাশি ৫ হাজার ১ শত ৯৯ জন শিশু বন্দি বা অপহৃত হয়েছে। এবং অন্তত ১৪ হাজার ২৫ জন শিশুকে জোরপূর্বক যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছে সিরিয়ার প্রশাসন। এর মধ্যে ২০২২ পর্যন্ত ৬৭ জন নিহত হয়েছে।
ইয়ামানের শিশুরা
ইয়ামানের গৃহযুদ্ধের ৯ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে এই বর্বরোচিত সময়ে ১১ হাজারের মতো শিশু নিহত হয়েছে। প্রায় ১০ মিলিয়নের মত শিশু মানবিক সহযোগিতার আশায় পথ চেয়ে আছে। পাশাপাশি ২.৭ মিলিয়নের মত শিশু ভুগছে অপুষ্টিতে।
সুদানের শিশুরা
সুদানের গৃহযুদ্ধ ভয়ানক আকার ধারণ করেছে অনেক আগেই। এই যুদ্ধের কারণে ১৯ ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৪৩৫ জন শিশু শহিদ হয়েছে । আহত হয়েছে ২০০০ এর অধিক৷ পাশাপাশি ৫৫ হাজার শিশু অপুষ্টি এবং নানা ধরনের রোগের কারণে প্রতি মাসেই অচিকিৎসায় ভুগছে। এছাড়া ১৩.৬ মিলিয়ন শিশু ব্যাপক মানবিক সহায়তার আশায় তাকিয়ে আছে পৃথিবীর দিকে৷
কাশ্মীরের শিশুরা
২০১৮ সালে সংবাদমাধ্যম টিআরটির প্রকাশিত একটি আর্টিকেলের সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ৩৯২ জন শিশু নিহত ও নিখোঁজ হয়েছে। আর্টিকেলের শেষে বলা হয়, কাশ্মিরে মিডিয়া ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অপ্রতুল। অন্যথায় কাশ্মীরে শিশু সহিংসতার পরিমাণ অনেক বেশি।
আরাকানের শিশুরা
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ আরাকানের রোহিঙ্গা শিশুরাও বাংলাদেশে করছে মানবেতর জীবনযাপন। বিশ্বব্যাপী কাজ করা চ্যারিটি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশের এক জনপ্রিয় পত্রিকাকে দেয়া তথ্যমতে, আরাকান থেকে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে প্রতি দুই রোহিঙ্গা শিশুর একজন মা অথবা বাবাকে হারিয়েছে। একই সংস্থার অন্য আরেকটি তথ্যমতে, আনুমানিক ৭৫ পার্সেন্ট শিশু অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর ময়লা তাঁবুতে জন্মগ্রহণ করে।
আহা শৈশব ! আহা নিষ্ঠুর পৃথিবী। ঘুড়ি উড়ানো সেই রঙিন শৈশব কে তাদের ফিরিয়ে দেবে? একটি কোমল ও সুন্দর সকাল আর হেসে উঠবে তাদের জীবনে? রেহাল হাতে আবার তারা মকতবে ছুটবে। দেখবে স্বপ্ন।
সূত্র : আল জাজিরা ও অন্যান্য