আজকের শিশু আগামীর দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ উন্নতি ও অগ্রগতি করতে চাইলে শিশুদের লালন-পালন, শিক্ষা-দীক্ষা প্রতিটি বিষয়ে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আমরা যদি শিশুদের কোমল হৃদয়ে ন্যায়, ইনসাফ সত্য ও সুন্দরের ফুল গেঁথে দিতে পারি তাহলে ঘরে, সমাজে, রাষ্ট্রে সর্বত্র সে সৌরভ ছড়াবে। শিশুর কোমল হৃদয়ে যদি দীন ও ইসলামের আলো জ্বালানো হয়, তাহলে সে প্রদীপ হয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করবে। তাই শিশুদের লালন-পালন, শিক্ষা-দীক্ষা প্রতিটি বিষয়ে আমাদের নববী আদর্শ গ্রহণের বিকল্প নেই। শিশু প্রতিপালনে নববী আদর্শের বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করা হলো।
শিশুদের প্রতি স্নেহশীল হওয়া
হযরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নাতি হাসান রাজিয়াল্লাহু আনহুকে চুমু খেলেন। সেখানে সাহাবি আকরা ইবনে হাসিব রাজিয়াল্লাহু আনহু বসে ছিলেন। হাসানকে চুমু দিতে দেখে তিনি বললেন, আমি ১০ সন্তানের জনক। আমি তাদের কাউকে এখনও পর্যন্ত চুমু দেইনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে কোমলতা প্রদর্শন করে না, তার প্রতিও কোমলতা প্রদর্শন করা হয় না।
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আয়েশা রাজিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। নবিজী তাকে বললেন, তোমরা কি তোমাদের শিশুদের চুমু দাও? সে বলল, না, আমরা তাদের চুমু দেই না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের অন্তরে যদি দয়ামায়া না থাকে, তাহলে আমার কী করার আছে?
আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় হাসান ও হুসাইন রাজিয়াল্লাহু আনহুমা লাল জামা পরে মিম্বরের নিকট ছুটে আসলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নেমে তাঁদের কোলে তুলে নিলেন। বললেন, ‘তোমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি একটি পরীক্ষার বিষয়!’
শিশুকে সুশিক্ষা দেওয়া
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। তাই জাতির মেরুদন্ড মজবুত রাখতে চাইলে শিশুকে সুশিক্ষা দিতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ এমন পিতার প্রতি রহম করুন যে তার পুত্রকে সৎ কাজে সহযোগিতা করে।
সালাম ও নামাজ শিক্ষা দেওয়া
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আনসারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতেন, তখন শিশুদের সালাম দিতেন। তাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে তাঁদের জন্য দোয়া করতেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজের আদেশ করো। দশ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে প্রহার কর। দশ বছর বয়স হলেই বিছানা আলাদা করে দাও।’
ভুল করলে সুন্দরভাবে শোধরে দেওয়া
হযরত উমর ইবনে আবি সালমা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বালক অবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোলে ছিলাম এবং আমার হাত থালার উপর ঘুরছিল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, বৎস! আল্লাহর নামে খাওয়া শুরু করো, ডান হাতে তোমার সামনের দিক থেকে খাও।
রাফি বিন উমর আলগিফারি রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি একজন বালক ছিলাম। আনসারদের খেজুর গাছে ঢিল ছুঁড়ছিলাম। হঠাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। তাঁকে বলা হল, এখানে একটি ছেলে ঢিল ছুঁড়ছে। আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু এর নিকট নিয়ে আসা হলো। নবিজী বললেন, খেজুর গাছে ঢিল ছুঁড়ো না, গাছের নীচে যা কিছু পড়ে থাকে তা খাও। এরপর নবিজী আমার মাথা মুছে দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ! আপনি তার ক্ষুধা মিটিয়ে দিন।’
আমরা স্নেহ, ভালবাসা, মায়া, মমতা ও সুশিক্ষা দিয়ে আমাদের সন্তানদের গড়ে তুলব। তারা যেন আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা ও মুক্তির মাধ্যম হতে পারে ।