খালিদ বিন ওয়ালিদ। ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। ‘সৈন্যদের মধ্যমণি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন যিনি। যুদ্ধের ময়দানে তাঁর সাহসিকতা ও কৌশলের ফলে আজও যিনি ইতিহাসের পাতায় কিংবদন্তি হয়ে আছেন।
মক্কার সাহসী যোদ্ধা থেকে ইসলামি বাহিনীর সেনাপতি হিসেবে তাঁর উত্থান ছিল ব্যক্তি পরিবর্তনের চমৎকার এক উদাহরণ। তাঁর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী অনেক গৌরবময় যুদ্ধে জয়লাভ করে। সাহস ও বীরত্বে ভরা তাঁর জীবন মূলত একটি ইতিহাস। মুসলিম উম্মাহর জন্য যা গর্ব ও অনুপ্রেরণার উৎস।
খালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহুর জন্ম
আনুমানিক ৫৯২ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। খালিদ ছাড়া তাকে আবু সালিম নামেও ডাকা হত।
বংশ পরিক্রমা: খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ইবনে মুগিরাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আল মাখজুম ইবনে ইয়াকজাহ ইবনে মুআররাহ ইবনে কাব ইবনে লুই ইবনে গালিব। অষ্টম পুরুষ গালিব থেকে তাঁর বংশ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশ একীভূত হয়ে যায়। তাঁর পিতা ওয়ালিদ মক্কার কুরাইশের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। মক্কায় তাকে আল ওয়াহিদ বলেও ডাকা হত। খালিদ বিন ওয়ালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহুর মা লুবাবা আস সুগরা বিনতে আল হারিস ছিলেন মায়মুনা বিনতে আল হারিসের চাচাত বোন।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে খালিদ বিন ওয়ালিদ ইসলাম ও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ভুলে তাকে কাছে টেনে নেন। ইসলাম গ্রহণের পর খালিদ বিন ওয়ালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহু সর্বপ্রথম যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, সেটা ছিল মুতা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পূর্ণ সাহসের সাথে বীরত্বের অনন্য নজির স্থাপন করেন তিনি। যার পুরস্কারস্বরূপ রাসুলের থেকে সাইফুল্লাহ বা ‘আল্লাহর তলোয়ার’ উপাধি লাভ করেন।
খালিদ বিন ওয়ালিদের বৈশিষ্ট
শারীরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী খালিদ বিন ওয়ালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহু চলাফেরায়ও ছিলেন প্রচণ্ড বুদ্ধি, উদারতা ও সাহসিকতার অধিকারী। কুস্তি, তীর নিক্ষেপণ, বর্শাবাজি এবং বক্তৃতার জন্য তৎকালীন আরবে বেশ পরিচিত ছিলেন তিনি।
ইসলাম গ্রহণ
৮ম হিজরির মক্কা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিজে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন।
খালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহুর পরিবার
খালিদ বিন ওয়ালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহু দুটি বিয়ে করেন। তাঁর সন্মানিতা স্ত্রীগণ হলেন: আসমা বিনতে আনাস ইবনে মুদরিক। উম্মে তামিম বিনতে আল মিনহাল। তাঁর তিনজন পুত্র সন্তানও ছিলো। যাদের নাম: আব্দুর রহমান, মুহাজির, সুলায়মান।
খালিদ বিন ওয়ালিদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে খালিদ বিন ওয়ালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহু মুসলমানদের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও, ইসলাম গ্রহণের পর মুসলিম হিসেবে অসংখ্য যুদ্ধ পরিচালনা করেন তিনি। তার মধ্যে বিশেষ কতগুলো যুদ্ধ হলো:
- মুতার যুদ্ধ। ২ থেকে ৩ হাজার সাহাবীর ২ লাখেরও অধিক শত্রুর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে তিন সেনাপতি শহিদ হওয়ার পর খালিদ বিন ওয়ালিদ রাজিয়াল্লাহু আনহু সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং পরাজয়মুখী যুদ্ধকে বিজয়ে রূপ দেন।
- মক্কা বিজয়। মক্কা বিজয়ে তিনি সেনাবাহিনীর ডান দিকের নেতৃত্ব দেন।
- হুনাইন যুদ্ধ। এ যুদ্ধে তিনি অগ্রসর যোদ্ধাদের একজন ছিলেন এবং এই যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি।
- দাউমাতুল জান্দাল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে তিনি উকাইদির ইবনে আব্দুল মালিককে পরাজিত করেন।
- ইয়ারমুক যুদ্ধ। এ যুদ্ধে তিনি মুসলমানদের নেতৃত্ব দেন এবং রোমানদের বিরুদ্ধে জয়ী হন।
- রিদ্দার যুদ্ধ। এ যুদ্ধেও তিনি অবিস্মরণীয় বীরত্বের প্রমাণ দেন।
রবের সান্নিধ্যে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ
খালিদ বিন ওয়ালিদ ২১ হিজরিতে, ৫৫ বছর বয়সে হিমস শহরে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাত্রা করেন। যুদ্ধ ময়দান দাপিয়ে বেড়ানো এ বীরযোদ্ধা মৃত্যুর সময় বিছানায় মৃত্যুবরণে অনেক আফসোস করছিলেন। কিন্তু আল্লাহর তরবারি তো ভাঙা যায় না! ইন্তেকালের পর অপরাজেয় এই বীরকে সিরিয়ার হিমস শহরে সমাহিত করা হয়।
শাহাদাত হুসাইন
- শাহাদাত হুসাইন#molongui-disabled-link
- শাহাদাত হুসাইন#molongui-disabled-link
- শাহাদাত হুসাইন#molongui-disabled-link
- শাহাদাত হুসাইন#molongui-disabled-link