সম্প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর উপর স্মরণকালের ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় হতাহতের ব্যাপারে লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাস আল-ওয়াইত জানান, আকস্মিক এই হামলায় এপর্যন্ত এক শিশুসহ মোট ৯ জন নিহত হয়েছে। পাশাপাশি আহত হয়েছে ২ হাজার ৭৫০ জন। যাদের বেশিরভাগই ছিল হিজবুল্লাহর সদস্য এবং এদেরমধ্যে ২০০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভয়াবহ এই হামলার পরপরই এরজন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে হিজবুল্লাহ। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়েছে, এই অপারেশনের সাথে কোনভাবেই তারা জড়িত নয়।
পেছনের গল্প
লেবাননের আলোচিত পেজার বিস্ফোরণের মূল ঘটনা এতটুকুই। কিন্তু আলোচিত এই হামলার উপর নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশ করা বিশদ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যে তথ্য হার মানাবে যে কোন স্পাই থ্রিলারকে। মোসাদের ট্র্যাকিং থেকে বাঁচার জন্য তাইওয়ানের ‘গোল্ড অ্যাপোলো’ নামক একটি কোম্পানি থেকে ৩ হাজারেরও বেশি যোগাযোগ ডিভাইস ‘পেজার’ অর্ডার করে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহর উদ্দ্যেশ্য ছিল প্রথমে নিজেরা, এরপর সিরিয়া ইরানে থাকা নিজ মিত্রদের কাছে ডিভাইসগুলো হস্তান্তর করা। কিন্তু বিধিবাম, পুরো ব্যপারটি ইসরায়েলের গোয়েন্দারা টের পেয়ে যায়।
দৃশ্যপটে ইসরায়েলের আবির্ভাব
পুরো ব্যপারটি ইসরায়েলের গোচরীভূত হওয়ার সাথে সাথে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ডিভাইসগুলোর ব্যাপারে তৈরি করে গভীর মাস্টারপ্ল্যান। ইসরায়েলের কাছে তাইওয়ান থেকে হিজবুল্লাহর জন্য আসা ডিভাইসগুলোর ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য থাকলেও, ইসরায়েল ‘পেজার’ ডিভাইসগুলোকে হিজবুল্লাহর হাতে পৌঁছতে দেয় তবে একটু পরিবর্তনসহ।
ইসরায়েল অত্যন্ত চতুরতার সাথে সেই ডিভাইসগুলোর ব্যাটারির পাশে ছোট আকারের বিস্ফোরক স্থাপন করে দেয়। ডিভাইসে বিস্ফোরক সেট করার উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমস কে জানায়, ডিভাইসগুলো লেবাননে হিজবুল্লাহর সদস্যদের মধ্যে এবং তাদের ইরান ও সিরিয়ার মিত্রদের কাছে বিতরণ করা হয়েছিল। আমরা এসব ডিভাইসে এমনভাবে প্রোগ্রামিং সেট করেছিলাম, যাতে নির্দিষ্ট সময়ে চাইলেই সেগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটানো যায়।
এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ সংবাদপত্র মনিটর জানায়, হিজবুল্লাহর হাতে পৌঁছানোর আগেই হাজারেরও বেশি ডিভাইসে ইসরায়েল বিস্ফোরক স্থাপন করে। ইসরায়েলের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধ শুরু হলে এই বিস্ফোরকগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েল কৌশলগত সুবিধা অর্জন করবে। কিন্তু হিজবুল্লাহ ডিভাইসগুলোতে সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করায় ইসরায়েল সময়ের আগেই সেগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটাতে বাধ্য হয়।
যেভাবে বাস্তব রূপ পায় কাগজের পরিকল্পনা
ওয়াশিংটন পোস্ট এবং মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএনের খবরে জানা যায়, ডিভাইসে বিস্ফোরক সেট করা ও বিস্ফোরণ ঘটানোর মিশনটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি যৌথ অপারেশন ছিল।
এই ঘটনায় তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় হিজবুল্লাহকে কর্ডলেস ডিভাইস ‘পেজার’ সরবরাহকারী তাইওয়ানের ‘গোল্ড অ্যাপোলো’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সু চিং কুয়াং জানান, বিস্ফোরিত ডিভাইসগুলো তার কোম্পানির লোগো বহন করলেও, সেগুলো একটি ইউরোপীয় কোম্পানি উৎপাদন করেছিল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে , তাইওয়ানের পুলিশ ইতিমধ্যে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্র : আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link