সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের অর্থপাচার সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট। যেখানে শুধুমাত্র রপ্তানির আড়ালে প্রায় ৮ কোটি মার্কিন ডলার দেশের বাইরে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। টাকায় রূপান্তর করলে যার পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৯৫৭ কোটি টাকা। বিরাট অঙ্কের এই অর্থ মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে পণ্য রপ্তানির নামে এভাবেই অর্থপাচারের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির তদন্তে জানানো হয় বেক্সিমকোর ১৭টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এই পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। বিশেষত, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দুবাইভিত্তিক ‘আর আর গ্লোবাল’ প্রতিষ্ঠানটি এই পাচারের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। দুবাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে পোশাক রপ্তানি দেখিয়ে প্রাপ্ত অর্থ দেশে না এনে আটকে রাখা হয় দুবাইতেই।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ঋণগ্রহীতা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত বেক্সিমকো গ্রুপ । ব্যাংকটির সাথে তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা আবার হয়ে পড়েছে খেলাপি। জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সিআইডিকে জানায়, ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে ফেরত আসেনি বেক্সিমকোর রপ্তানি আয়ের ৮ কোটি মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, রপ্তানির ১২০ দিনের মধ্যে আয়ের অর্থ দেশে ফেরত আনা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেক্সিমকোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। অর্থপাচারের এত বড় ঘটনার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকেও নেওয়া হয়নি যথাযথ ব্যবস্থা। অর্থ বিশেষজ্ঞদের মতে যা অনিয়মের আরেক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অর্থপাচারের এসব ঘটনায় সালমান এফ রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সিআইডি যৌথভাবে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সন্ধান পাওয়া গেছে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন বিদেশি সম্পদ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের। খোঁজ মিলেছে কিছু প্রতারণামূলক কার্যক্রমেরও।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বেক্সিমকোর মতো বড় প্রতিষ্ঠানের এমন কর্মকাণ্ড দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য বেশ বিপজ্জনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী মনে করেন, ১২ বছর ধরে রপ্তানি আয়ের অর্থ দেশে ফেরত না আনা এবং ব্যাংক ঋণের ব্যাপক অনিয়মের পেছনে থাকা অর্থপাচারের উদ্দেশ্য দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রি করে হলেও অর্থ আদায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
উল্লেখ্য, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সিআইডির পক্ষ থেকে করা হচ্ছে দ্রুত আইনি ব্যবস্থাগ্রহণের পরিকল্পনা। এছাড়াও বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তারা।