গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে ক্রমাগত অবনতির দিকে গিয়েছে। কোম্পানির দায়িত্বরত প্রত্যেক কর্মকর্তাই দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের তুলনায় টেলিটকের গ্রাহক সেবা নিম্নমানের হওয়ায় গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধিতেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন । যদিও টেলিটক ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করেছিল বেশ কিছু উচ্চাপ্রত্যাশাকে সঙ্গে করে। কিন্তু সেই আশা আর বাস্তবতার মুখ দেখেনি।
২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর টেলিটক মোবাইল অপারেটর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, সরকারি মোবাইল সেবার মাধ্যমে জনগণকে সেবা দেওয়া, বেসরকারি ও সরকারি অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা, দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকায় টেলিকম সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারের জন্য রাজস্ব আহরণ করা। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব লক্ষ্য পূরণে টেলিটক সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
বর্তমানে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ৬.৫৫ মিলিয়ন। যেখানে গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংক যথাক্রমে ৮৫.২৪ মিলিয়ন, ৫৮.৯২ মিলিয়ন এবং ৪৩.৫৬ মিলিয়ন গ্রাহক নিয়ে এগিয়ে রয়েছে। টেলিটকের সেবার মান এবং গ্রাহক সেবার দুর্বলতা এই ব্যাপক পার্থক্যের অন্যতম কারণ। তাছাড়া, টেলিটকের নেটওয়ার্ক কাভারেজও অত্যন্ত সীমিত, যা দেশের অনেক অঞ্চলেই সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
টেলিটকের দূর্নীতি নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিতই দূর্নীতির মামলা করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোর নিষ্পত্তি হয় না। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, টেলিটকের প্রকল্পগুলো দূর্নীতি করার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়। হাজার কোটি টাকার অপচয় এবং লুটপাট এই প্রতিষ্ঠানের মানচিত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
টেলিটকের হাজার হাজার সিম অবৈধ ভিওআইপি (VOIP) কলিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। এসব সিমের মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষাধিক মিনিটের অবৈধ কল করা হয় বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টেলিটকের ৭৭,৫৯০টি সিম বন্ধ করে দেয়। টেলিটকের কিছু সংঘবদ্ধ কর্মী এই অবৈধ কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।