দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মার্কিন দখলদারিত্বের অধীনে থাকা আফগানিস্তান আজ ক্রমাগত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এবং ক্রমাগত অস্থিরতায় জর্জরিত এই দেশটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন দখলদারদের থেকে মুক্তি লাভের পর নিজেদের অর্থনৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠনে নজিরবিহীন অগ্রগতি দেখিয়েছে। ইসলামি শাসনের অধীনে পরিচালিত বর্তমান সরকার শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ সম্পদের উপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি শক্তিশালী করার পথেও অগ্রসর হচ্ছে।
গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও টেকসই উন্নয়নের নামে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে দাবি করলেও, প্রকৃতপক্ষে তারা দেশটির ভাণ্ডার একদম খালি রেখে গেছে। দখলদারিত্বের অবসান হলে আফগান জনগণ দেখতে পায়, পূর্ববর্তী আফগান সরকার ও বিদেশি দখলদাররা দেশের কোন স্থায়ী অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডার শূন্য হয়ে গেছে, পাশাপাশি দেশের সম্পদও শাসক গোষ্ঠী আত্মসাৎ করেছে। ফলস্বরূপ আফগানিস্তান সেসময় এক কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়।
আফগানিস্তান থেকে পরাশক্তিগুলো নিজ বাহিনী প্রত্যাহারের পর আফগানি মুদ্রা মার্কিন ডলারের তুলনায় ব্যাপকভাবে মান হারাতে থাকে। মূলত বাজারে ডলারের ঘাটতি এবং বিদেশে ডলার পাচার হওয়ার কারণে এই মুদ্রার পতন ঘটে। ফলত দেশে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়। এমনকি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলো আফগানিস্তানের আসন্ন অর্থনৈতিক ধসের ভবিষ্যদ্বাণীও করা শুরু করে।
কিন্তু কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও নতুন সরকার হতাশ হয়নি। তারা বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভর না করে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে আফগানি মুদ্রার পতন রোধ করার জন্য একটি জরুরি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির কঠোর প্রচেষ্টার ফলে ডলারের পাচার রোধ করা হয় এবং মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে আফগানি মুদ্রার মান দখলদারিত্বের সময়কার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়াও গত বছর বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক কৌশলের দ্রুত সাফল্য দৃশ্যমান হয়। যখন আফগানিস্তানের রপ্তানি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে।
অন্যদিকে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের মনোযোগ এবং অভ্যন্তরীণ শিল্পখাতকে শক্তিশালী করার জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আফগানিস্তান ব্যাপক উন্নত হওয়ার পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সরকারের ক্রমাগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোশতেপা খালের খনন প্রকল্প। যা আমু নদীর পানি আফগানিস্তানের কৃষিজমিতে প্রবাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও সালং হাইওয়ে পুনর্গঠন এবং চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে খনিজ সম্পদ উত্তোলন প্রকল্পও দেশটির অর্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করছে।
আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার টানা ৩ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে বাজেট প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছে। যা আফগানিস্তানের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এদিকে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর না করে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার এই কৌশল দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমা অর্থনীতিবিদদের সমস্ত নেতিবাচক পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যারা আফগানিস্তানের অর্থনীতির পতনের পূর্বাভাস দিয়েছিল।
বর্তমান সরকার প্রশাসনিক কর্মচারীদের বেতন নিয়মিতভাবে প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। হাজার হাজার নতুন কর্মচারীও নিয়োগ করেছে। তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। নতুন এই কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামি শাসনের অধীনে বর্তমান আফগান সরকার ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছে। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রিজার্ভ আটকে রাখা ও দেশটির উপর আরোপিত বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবরোধ দেওয়া সত্ত্বেও দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং উন্নতির দিকে যাচ্ছে। যার মূল চালিকা শক্তি সরকারের দক্ষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং দৃঢ় নেতৃত্ব।
সুতরাং এটা বলাই যায়, আফগানিস্তান এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। যুদ্ধ, সংঘাত এবং দখলদারিত্বের দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে দেশটি একটি টেকসই এবং শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে সফল হচ্ছে।
সূত্র: হুররিয়্যাত রেডিওর প্রতিবেদন অবলম্বনে