নিউজনেস্ট

চারিত্রিক মাধুর্য ব্যবহার করে নিজেকে উপস্থাপন করুন স্মার্টরূপে

চরিত্র মাধুর্যতা ব্যবহার করে নিজেকে আদর্শ মানুষরূপে উপস্থাপন করুন
প্রতীকী ছবি। আলমাউদু এর সৌজন্যে

ইসলাম উত্তম চরিত্রকে অনেক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। কারণ, একজন মানুষ মর্যাদাবান হওয়া না হওয়া তার চরিত্রের উপর নির্ভর করে। নবি আলাইহিমুস সালামগণ পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাবান। কারণ তারা ছিলেন সবচেয়ে চরিত্রবান। আমাদের প্রিয় নবির চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী।’ রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের ২৩ বছরে তাঁর সুমহান মাধুর্যপূর্ণ উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেই পৃথিবীকে আলোকিত করেছিলেন। এছাড়াও উত্তম চরিত্রই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার মাধ্যম। তাই আসুন আমরা জেনে নিই, উত্তম চরিত্রের নির্দশনসমূহ:

  • মুখে প্রফুল্লতা ও সাবলীলতা রাখা।
  • ঝগড়া-বিবাদ তর্ক-বিতর্ক না করা।
  • ধৈর্যশীল ও কষ্ট সহিষ্ণু হওয়া।
  • নিজের দোষ-ত্রুটি জেনে শোধরানোর চেষ্টা করা।
  • অন্যের দোষ-ত্রুটির পেছনে না পড়া।
  • সকলের সাথে আচার-ব্যবহারে কোমলতা প্রদর্শন করা।
  • বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকা ও তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা।
  • মানুষের প্রতি সদয় হওয়া।
  • সত্যবাদী, ইনসাফবান, আমানতদার, লজ্জাশীল ও বিনয়ী হওয়া ।

উত্তম চরিত্রের ফজিলত

উত্তম চরিত্র একজন মানুষকে আল্লাহর প্রিয়ভাজনে পরিণত করে। বিচার দিবসে সৎ আমলের পাল্লাকে ভারি করবে।

আবু দারদা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন উত্তম চরিত্রই আমলনামার পাল্লায় সবচে’ বেশি ভারি হবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২০০৩)

উত্তম চরিত্র জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম

আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল জান্নাতে প্রবেশের জন্য বেশি সহায়ক হবে? রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২০০৪)

আবু উমামা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার চরিত্র সুন্দর করবে, আমি সর্বোত্তম জান্নাতে তার বাড়ির জিম্মাদার হব। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮০২)

কেয়ামতের দিন আল্লাহর রাসূলের নৈকট্য লাভ

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার সবচে’ প্রিয় এবং আমার মজলিসের বেশি নিকটবর্তী তারাই থাকবে যারা তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রবান। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২০১৮)

উত্তম চরিত্র ঈমানদারের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেই  ঈমানদারের ঈমানের পূর্ণতা পায়।

আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের হিসেবে সর্বোত্তম মুমিন সেই ব্যক্তি, যে চরিত্রের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৭৪০২)

আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আমি চারিত্রিক গুণাবলি পরিপূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮৯৩৯)

উত্তম চরিত্র উত্তম ইবাদতের সমতুল্য

আয়েশা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই মুমিনগণ উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে সর্বদা রোজা রাখে ও তাহাজ্জুদ আদায় করে এমন ব্যক্তিদের মর্যাদা অর্জন করে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮০০)

উত্তম চরিত্র অর্জনের উপায়

ইসলামে উত্তম চরিত্র গঠনের কিছু মৌলিক বিষয় পরিলক্ষিত হয়। যা উত্তম চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট উপায় বলে মনে করা হয়। সেগুলো হলো:

  সত্যবাদিতা

আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যেসব ইসলামি চরিত্রের নির্দেশ দিয়েছেন, তার অন্যতম হচ্ছে সত্যবাদিতা। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সূরা তওবা: ১১৯)

রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সত্যতা অবলম্বন কর। কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়।’

 • আমানতদারিতা

উত্তম চরিত্রের আরেকটি দিক হচ্ছে আমানতদারিতা। আল্লাহ তায়ালা আমানতদারিতা সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, আমানতসমূহ আপন হকদারদের নিকট পৌঁছে দাও।’ (সূরা নিসা: ৫৮)

রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গুণের জন্যই তাঁর সম্প্রদায় থেকে আলআমিন (বিশ্বাসী, আমানতদার) উপাধি লাভ করেছিলেন।

 • বিনয় ও নম্রতা

উত্তম চরিত্রের আরেকটি দিক হলো বিনয় ও নম্রতা। একজন মুসলমান তার  অপর মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করবে। চাই সে ধনী হোক বা গরিব। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হলো: ‘তুমি তোমার মুমিন অনুসারীদের সাথে নম্র আচরণ করো।’

 • পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার

পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা উত্তম চরিত্রের অন্যতম। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না এবং মাতাপিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো।’ (সূরা নিসা: ৩৫)

এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মাতাপিতার প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য আয়াতে তিনি তাদের প্রতি দয়া ও বিনয়পূর্ণ আচরণ এবং তাদের জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন।

 • আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ওয়াজিব। আর তা ছিন্ন করা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং অভিশাপের কারণ। কোরআন কারিমে এ বিষয়ে এরশাদ,  ‘যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারা (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীরা) তো সেসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। তিনি তাদেরকে বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টি অন্ধ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ: ২২-২৩)

রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে ইরশাদ করেন, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

 • অঙ্গীকারপূর্ণ

উন্নত চরিত্র গঠন করার ক্ষেত্রে এ দিকটি ভালোভাবে পালন করতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অঙ্গীকার পূর্ণ করো, কেননা অঙ্গীকার সম্বন্ধে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সূরা ইসরা: ৩৪)

তাছাড়া হাদিসে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাকে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

 • প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার

প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা উন্নত চরিত্রের অন্যতম দিক। প্রতিবেশী বলা হয় সেসব লোকদের, যারা আমাদের বাড়ির চারপাশে বসবাস করে। প্রতিবেশীদের প্রসঙ্গে কোরআন কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মাতাপিতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর; নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিকটতম প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর প্রতিও।’ (সূরা নিসা: ৩৬)

রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘জিবরাইল আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এতো বেশি অসিয়ত করছিলেন, এমনকি আমার ধারণা হচ্ছিল যে, প্রতিবেশীদেরকে আমার উত্তরাধিকার বানিয়ে দেওয়া হবে!’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

 • ধৈর্য ও কষ্টসহিষ্ণুতা

ধৈর্য ও কষ্ট সহিষ্ণুতা হলো উত্তম চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ প্রসঙ্গে কোরআন কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘ধৈর্য্ধারণ করা এবং ক্ষমা করা নিশ্চয়ই কাজের দৃঢ়তার অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আশশুরা: ৪৩)

 • লজ্জা

এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে পরিপূর্ণতা ও মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের দিকে আহ্বান করে। লজ্জা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। ফলে মুসলমান লজ্জা করে যে, আল্লাহ তাকে পাপাচারে লিপ্ত দেখবে। অনুরূপভাবে মানুষ থেকে এমনকি নিজ থেকেও সে লজ্জাবোধ করে। লজ্জা অন্তরে ঈমান থাকার প্রমাণ বহন করে। এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)

 • ন্যায়পরায়ণতা

ন্যায়পরায়ণতা আত্মার প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সমাজে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন প্রকার অপরাধ বিমোচন করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ইনসাফ করো, এটা তাকওয়ার অতীব নিকটবর্তী। (সূরা মায়িদা: ৮)

 • দয়া ও করুণা 

এ চরিত্রটি অনেক মানুষের অন্তর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের অন্তর আজ পাথরের মতো কিংবা তার চেয়ে অধিক শক্ত হয়ে গেছে। প্রকৃত মুমিন হচ্ছে দয়াময়, পরোপকারী ও গভীর অনুভূতিসম্পন্ন উজ্জ্বল অনুগ্রহের অধিকারী। এ বিষয়ে  রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, মুমিনদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য, করুণা, অনুকম্পার উপমা হচ্ছে একটি শরীরের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন গোটা শরীর নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।

 • চারিত্রিক পবিত্রতা

উত্তম চরিত্রের অন্যতম বিষয় হচ্ছে চারিত্রিক পবিত্রতা। আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে বলেন, ‘যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, তারা যেন চারিত্রিক পবিত্রতা গ্রহণ করে। যতক্ষণ না আল্লাহ তার অনুগ্রহে তাকে সম্পদশালী করেন।’ (সূরা নূর: ৩৩)

রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আমার জন্য ৬টি বিষয়ের জিম্মাদার হও। তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো। যখন তোমাদের কেউ কথা বলে, সে যেন মিথ্যা না বলে। যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে যেন তার খেয়ানত না করে। যখন প্রতিশ্রুতি দেয়, সে যেন তা ভঙ্গ না করে। তোমরা তোমাদের দৃষ্টি অবনত কর। তোমাদের হস্তদ্বয় সংযত রাখ। নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করো।

উল্লেখ্য, ইসলামী চরিত্রের অন্যতম বিষয় হচ্ছে চারিত্রিক পবিত্রতা। এ চরিত্র মানুষের সম্মান সংরক্ষণ এবং বংশে সংমিশ্রন না হওয়ার দিকে পৌঁছে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যাদের বিবাহের সামর্থ নেই, তারা যেন চারিত্রিক পবিত্রতা গ্রহণ করে। যতক্ষণ না আল্লাহ তার অনুগ্রহে তাকে সম্পদশালী করেন।’ (সূরা নূর-৩৩)

উন্নত চরিত্র ব্যক্তির আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে ও তার আচরণ-ব্যবহার পরিবর্তন করতে এবং তাকে দ্বীনদার বানাতে দুর্দান্ত প্রভাব ফেলে। দীনদার পূর্বসূরীদের গল্প অধ্যয়ন করাও এক্ষেত্রে আত্মাকে উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌছে দিবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন ।

ইসলাম ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত