নিউজনেস্ট

একজন আদর্শবান মা হবেন কিভাবে?

একজন আদর্শ মায়ের যে গুণ গুলো থাকা দরকার
একজন আদর্শবান মা যেসব গুণাবলীসম্পন্ন হবেন। ছবি: প্রতীকী

মা হল সেই বিদ্যাপীঠ যার উপর সমাজের ভিত্তি। এ কারণেই বলা হয়, তুমি একজন শিক্ষিত মা দাও, তাহলে আমি একটি শিক্ষিত জাতি দিব। কারণ, মা সন্তানদের লালন-পালন করেন। শিশুদের মন কাদা মাটির মতো নরম। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই গড়ে তোলা যায়।

মা যদি শিশুদের কোমল হৃদয়ে সত্য, ন্যায়-নীতির ফুল ফোটাতে পারে, তাহলে সেই ফুলের সৌরভ গোটা জাতিকে বিমোহিত করবে। তার হৃদয়ঘরে যদি ন্যায়-নীতির প্রদীপ জ্বালিয়ে দিতে পারে, তাহলে সে প্রদীপ পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করবে। তাই মাকেই সন্তানদের জীবনে ন্যায়-নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। আর ঠিক এ জন্যই একজন মাকে মমতাময়ী হওয়ার পাশাপাশি আদর্শবান মা হতে হবে।

একজন মা কিভাবে আদর্শবান মা হবেন এ ব্যাপারে অনেকে অনেক নীতির কথা বলে, আদতে যা মেনে চলা খুবই কঠিন। তবে কিছু নিয়ম এমন আছে, যা অনুসরণ করে একজন মা সহজেই নিজেকে আদর্শ মা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।

  • মমতাময়ী মা হওয়ার পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া

একজন আদর্শবান মা হবেন এমন, যিনি তার সন্তানদের বিষয়ে অত্যধিক হস্তক্ষেপ না করে সন্তানদের সাথে মিশবেন এবং মজা করবেন।

  • সন্তানদের স্বাধীনতা প্রদান

আদর্শবান মা সন্তানদের এমন স্বাধীনতা প্রদান করে যা তাদের উপযুক্ত বিষয়ে উৎসাহিত করার পাশাপাশি তাদের আগ্রহ বাছাই করতে সহায়তা করে। এবং সন্তানকে নিজ থেকে আপন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

  • সন্তানের প্রতি নম্র হওয়া

একজন আদর্শবান মা’র এমন হওয়া উচিত, যে নিজেকে নিখুঁত মনে করবেন না এবং সন্তানদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সন্তানদের সাথে পরামর্শ করবেন।

  • সন্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া

আদর্শবান মা সন্তানদের প্রতি তার অনুভূতি পরিবর্তন করে না। তারা তাকে যতই আঘাত করুক না কেন, তিনি তা সামলে নেন।

  • ভালো শ্রোতা হওয়া

আদর্শবান মা তার সন্তানদের কথা শোনেন। ভুল হলে কিছু নির্দেশনা দেন; কিন্তু তা কর্তৃত্ববাদী উপায়ে নয়।

  • সন্তানকে আগলে রাখা

আদর্শবান মা তার চারপাশের পরিস্থিতি নির্বিশেষে তার সন্তানদের একা ছেড়ে যান না।

  • সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করা

আদর্শবান মা তার সন্তানদের সাথে তার ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী আচরণ করেন এবং তাদের বিভিন্ন মতামত এবং তাদের প্রত্যেকের জীবনধারা বোঝেন।

  • সন্তানের প্রতি সাহায্যকারী হওয়া

আদর্শবান মা তার সন্তানদের ভবিষ্যতের পথ তৈরি করতে সাহায্য করেন। এমনিভাবে সন্তানদের বিপদজনক পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন।

  • নিজে একজন বিশ্বাসী হওয়া

আদর্শবান মা সন্তানদের আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক মূল্যবোধ মেনে চলতে শেখান। তাদের সত্যের পথে হাঁটতে উৎসাহিত করেন এবং সন্তানদেরকে তার অভিজ্ঞতার চেয়ে ভাল জীবন দেওয়ার চেষ্টা করেন।

  • নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা

আদর্শবান মা নিজেকে অন্য মায়েদের সাথে তুলনা করেন। তার ভুলগুলো উন্মোচন করার চেষ্টা করেন। এভাবে একজন আদর্শবান মা হিসেবে নিজেকে উন্নত করেন।  

  • স্বপ্ন বিলাসী হওয়া

একজন স্বপ্ন বিলাসী মায়ের পক্ষেই একটি স্বপ্ন বিলাসী সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব। কারণ, একজন স্বপ্নবতী নারী পুরো জাতিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। আর উপহার দেন এমন মনীষীদের, জাতির মাঝে যারা অমর হয়ে থাকেন চিরকাল।

  • দক্ষ সংগঠক হওয়া

আদর্শবান মা তার নিজের ও সন্তানদের সময় সংগঠিত করেন। যাতে তিনি নিজের যত্ন নিতে পারেন এবং কিছু সময় নিজের পিছনেও ব্যয় করেন।

  • উপলব্ধিসম্পন্ন হওয়া।

আদর্শবান মা তার সন্তানদের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হন। যেমন: পোশাক-আশাক, খাবার-দাবার, স্কুলের বই-খাতা এবং খেলনাপাতি, নৈতিক কথা এবং কাজ।

  • স্বেচ্ছাসেবী হওয়া

আদর্শবান মা তার সন্তানদের জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করেন। সমাজ এবং মানুষকে খুশি করার জন্য নয়।

  • পরিমিতিবোধসম্পন্ন হওয়া

আদর্শবান মা সন্তানদের অত্যধিক আদর করে নষ্ট করেন না। অন্যদের সম্মান করতে এবং ভাল সম্পর্ক অর্জন করতে শেখান। আদর্শবান মা বাচ্চাদের আচরণ এবং তাদের অনুরোধের সাথে ধৈর্যশীল হন। যদিও তা কখনও কখনও অতিরিক্ত হয়।

  • পরিশ্রমী হওয়া

আদর্শবান মা গৃহস্থালির সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেন। সন্তানদের কাজের গুরুত্ব শেখান এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করেন।

এ জন্যই একজন মা জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একজন মা’ই পারেন পুরো একটি জাতিকে আমূলে পরিবর্তন করার বাস্তব স্বপ্ন দেখতে। তাই প্রত্যেক মায়েদের উচিত, নিজেকে একজন আদর্শবান মা হিসেবে গড়ে তোলা।

নুর মোহাম্মাদ
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত