নিউজনেস্ট

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যা ঘটলো গতকাল
ইউক্রেনের ক্রামাতোর্স্ক শহরে একটি বিল্ডিংয়ে রাশিয়ার বোমা হামলার পর একজন নারীকে সাহায্য করছে পুলিশ। ছবি : এএফপি

তিন বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বয়স। দীর্ঘ এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের অবস্থান দিচ্ছে না কোন শান্তির আভাস। গতকাল ছিল এই যুদ্ধের ৯৪৪তম দিন। গতকাল যুদ্ধের ময়দানে এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে ঘটেছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

লড়াইয়ের পরিস্থিতি

গতকাল পূর্ব ইউক্রেনের ক্রামাতোরস্ক শহরে রাশিয়ার বোমা হামলায় কমপক্ষে দুইজন নিহত এবং ১৯জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের আঞ্চলিক গভর্নর ভাদিম ফিলাশকিন।

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভুহলেদার শহরের কাছে অবস্থিত হোস্ট্রে ও গ্রিহোরিভকা গ্রাম দখল করেছে।

অপরদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, ভুহলেদার অঞ্চলে আটটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গভর্নর ফিলাশকিন জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী ভুহলেদারে উপস্থিত থাকলেও শহরটি দখল করতে পারেনি।

এদিকে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, গতকাল রাতে রাশিয়ার ৩২টি ড্রোন হামলার মধ্যে ২৮টি এবং ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে ৪টি সফলভাবে ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়ার ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে ইউক্রেনের ওডেসা অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ কিপার জানিয়েছেন, চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি জনশূণ্য এলাকায় আঘাত করে এবং দুটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

রাজনীতি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ

এদিকে জাতিসংঘের চলমান সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে  বিশ্বনেতাদের ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। এছাড়াও বক্তব্যে বিশ্বনেতাদের কাছে জেলেনস্কি একটি বাস্তব ও ন্যায়সঙ্গত শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার আবেদন করেন। জেলেনস্কি চীন ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোর ‘আধা-সদিচ্ছাপূর্ণ সমাধান পরিকল্পনা’র সমালোচনা করে বলেন, এসব পরিকল্পনা ইউক্রেনের স্বার্থকে উপেক্ষা করে তাদের নিজেদের স্বার্থেই গৃহীত হয়েছে। এসময় জেলেনস্কি শান্তি পরিকল্পনার প্রধান শর্ত হিসেবে বলেন, রাশিয়াকে দখলকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য রাশিয়ার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পুনর্গঠন সহায়তায় নতুন উদ্যোগ নেবে। তিনি ইউক্রেনের জন্য আরো সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং ইউক্রেন পুনর্নির্মাণে সহায়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান।

উল্লেখ্য, বাইডেন ও জেলেনস্কির মধ্যে হোয়াইট হাউসে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জাতিসংঘে তার প্রথম বক্তৃতায় ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি জানান, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে প্রায় ৬,০০,০০০ রুশ সেনা হতাহত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এমন গণবিধ্বংসের পর রাশিয়া কীভাবে জাতিসংঘে নিজের মুখ দেখাতে পারে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

অপরদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জেলেনস্কির শান্তিচুক্তির প্রস্তাবের জবাবে বলেন, রাশিয়াকে শান্তিতে বাধ্য করা একটি ‘মারাত্মক ভুল’ হবে। পেসকভ আরও জানান, রাশিয়া কেবল তখনই শান্তি আলোচনা করবে, যখন তাদের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে এবং ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের লক্ষ্য’ পূরণ হবে।

এদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে কিছু ছাড় দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি দাবি করেন ‘সবচেয়ে খারাপ চুক্তিটি’ও যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে ভালো হবে।

অস্ত্র ও সামরিক তৎপরতা

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি নতুন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাশিয়ার পারমাণবিক প্রক্রিয়া ব্যবহারের ন্যূনতম সীমা কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশের দ্বারা সমর্থিত একটি দেশের আক্রমণকে যৌথ আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। যদিও পুতিন সরাসরি ইউক্রেনের কথা উল্লেখ করেননি, কিন্তু ইউক্রেন তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে রাশিয়ার গভীরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানাচ্ছে।

অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইউক্রেনের জন্য ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন সামরিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন। যে সহায়তার মধ্যে রয়েছে এইচএমএআরএস রকেট লঞ্চার, জ্যাভলিন মিসাইল এবং কৌশলগত হালকা যানবাহন। আমেরিকার সরবরাহকৃত এই অস্ত্রগুলো যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেনের বাহিনীতে মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও আগামী মাসগুলিতে ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে।

অপরদিকে রাশিয়ার অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি আলমাজ-আন্তেইয়ের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আইইএমজেড কুপোল’ চীনে দূরপাল্লার ড্রোন তৈরির একটি প্রকল্প চালু করেছে, যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহৃত হবে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত