সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির নোগুচি মিউজিয়ামের একটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিখ্যাত পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ঝুম্পা লাহিড়ী। ফিলিস্তিনি কুফিয়া পরায় মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ তিন কর্মচারীকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর বুধবার নিউয়র্কের নোগুচি মিউজিয়াম ঘোষণা জানায়, ঝুম্পা লাহিড়ী ২০২৪ সালের ইসামু নোগুচি পুরস্কার গ্রহণ করবেন না।
সম্প্রতি মিউজিয়ামটি তাদের পোশাকবিধি পরিবর্তনের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক প্রতীক প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার অধীনে ফিলিস্তিনি কুফিয়া পরিধানকারী তিনজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়। আর এরই প্রতিবাদে লাহিড়ী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। প্রতিক্রিয়ায় মিউজিয়ামটি তাদের এক বিবৃতিতে জানায়, আমরা তার মতামতকে সম্মান করি এবং বুঝতে পারি যে আমাদের পোশাকবিধি নীতি সবার মতের সঙ্গে নাও মিলতে পারে।
ফিলিস্তিনি কুফিয়া হচ্ছে বিশ্বজুড়ে গাজা সমর্থক বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতীকী পোশাক। যা ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাও বহুবার ফিলিস্তিনের প্রতি তার সমর্থনকে বোঝাতে এই কুফিয়া পরিধান করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ঝুম্পা লাহিড়ী একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক। যিনি ২০০০ সালে তার প্রথম গ্রন্থ ‘ইন্টারপ্রেটার অব ম্যালাডিস’ এর জন্য বিশ্ববিখ্যাত পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্যের দুনিয়ায় ঝুম্পা একজন বিশেষ প্রতিভা হিসেবে স্বীকৃত। তার কাজগুলো মানুষের অভিবাসন, সংস্কৃতির সংঘাত এবং ব্যক্তি পরিচয়ের জটিলতাগুলো তুলে ধরে।
উদ্বেগের বিষয় হল, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেরমন্ট রাজ্যে গুলিবিদ্ধ তিন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থীর দুইজনই কুফিয়া পরে ছিলেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে অনেক ব্যক্তি গাজার পরিস্থিতি নিয়ে মত প্রকাশের জন্য তাদের চাকরি হারিয়েছেন। গত মে মাসে পুরস্কার গ্রহণের বক্তব্যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করায় নিউইয়র্ক সিটির একটি হাসপাতালের এক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত নার্সকে বরখাস্ত করা হয়।
অথচ আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছে ইসরায়েল। যে যুদ্ধে এখন পর্যন্ত নারী শিশুসহ ১ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেই সাথে যুদ্ধের কারণে গাজায় বর্তমানে বিরাজ করছে ধ্বংসযজ্ঞ, মহামারী আর খাদ্য সংকট।
ঝুম্পা লাহিড়ীর এই পদক্ষেপ মানবিকতার এক শক্তিশালী উদাহরণ। নিজ অবস্থানের মাধ্যমে তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা এবং মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন।
সূত্র: আলজাজিরা