তারিখ প্রদর্শন

আরেকটি যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলের অর্থনীতি কি প্রস্তুত?

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: আরেকটি যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলের অর্থনীতি কি প্রস্তুত?
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: আরেকটি যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলের অর্থনীতি কি প্রস্তুত? ছবি: প্রতীকী

প্রায় বছর ধরে চলমান গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি না টেনেই সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলে হিজবুল্লাহর সাথেও সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার উপর উত্থাপিত সবচে বড় প্রশ্ন— ইসরায়েলের অর্থনীতি কি একইসাথে দুই দুইটি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম?

সম্প্রতি অর্থনীতি বিষয়ক বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্ট থেকেও তোলা হয়েছে একই প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। কারণ, গাজার দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে ইসরায়েলের অর্থনীতি সম্মুখীন হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিকূল অবস্থার। দ্য ইকোনমিস্টের একটি প্রতিবেদনে এসব উঠে এসেছে অনেকটা বিশদ আকারেই।দ্য ইকোনমিস্টে উল্লেখিত ‘সেই প্রতিকূল অবস্থাগুলো’ হল নিম্নরূপ—

ইসরায়েলি ব্যংকগুলোর মূলধন সংকট

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে ইসরায়েলিদের ভেতর। ফলে এক দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংকটে পতিত হয় ইসরায়েলি ব্যাংকগুলো। শুধুমাত্র চলতি বছরের মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যেই ইসরায়েলি ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত অর্থের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলার।

শেকেলের মূল্য উঠানামা

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলে বেড়েছে অর্থনৈতিক অংশীদারদের হতাশা। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি মুদ্রা শেকেলের মূল্যের ‍উঠানামা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ইসরায়েলি ব্যাংকগুলোর উপর চাপ বৃদ্ধি করছে। ফলে একে একে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক অংশীদারেরা। গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েল আবারও সংঘাতে জড়ালে যে প্রতিকূল পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে— সেটা বলাই বাহুল্য। 

ব্যাংক সঞ্চয় স্থানান্তরের প্রবণতা 

ইসরায়েলের অর্থনীতির আরেকটি প্রতিকূল পরিস্থিতি হচ্ছে, ইসরায়েলের ব্যাংকগুলো থেকে একের পর এক সঞ্চয় তুলে ফেলছে ইসরায়েলিরা। ইসরায়েলি শীর্ষ তিন ব্যাংকের তথ্যমতে, ইসরায়েলে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সঞ্চয় স্থানান্তরের হার। যা ইসরায়েলি অর্থনীতিতে তৈরি করছে আস্থার সংকট। 

পতনমুখী অর্থনীতি

গাজায় দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ফলে গেল এপ্রিল এবং জুনে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে রেকর্ড ০.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। যা অর্থনীতিবিদদের হতাশ করার পাশাপাশি ইসরায়েলকে এখনও ভোগাচ্ছে।

অসহনীয় হচ্ছে বাজেট ঘাটতি

দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে ইসরায়েলের বার্ষিক বাজেটের উপর। চলতি বছর ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ যুদ্ধের ব্যয়ভার মেটাতে দুই দুইবার বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধির অনুরোধ করেছেন। ফলে এত বড় সামরিক ব্যয়ের ঘাটতি পূরণ করা নিয়ে ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

উপরোল্লেখিত প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা বাদ দিলেও গাজায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ফিলিস্তিনের অন্যান্য শহরে সংঘাতকে টেনে নিয়ে যাওয়া ইসরায়েলকে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করেছে। যার ফলে খোদ ইসরায়েলের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকেরাই সামরিক ব্যয়ের বিরাট বোঝা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সুতরাং ইসরায়েলের এমন সংকটাপন্ন অর্থনৈতিক অবস্থায় লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে সংঘাতে জড়ালে ইসরায়েলের অর্থনীতি আরেকটি সর্বব্যাপী যুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে পারবে কিনা সে প্রশ্ন ঘুরেফিরে বারবার আসবেই।

আমাদের ফলো করুন