সম্প্রতি আমেরিকার বিখ্যাত পত্রিকা ব্লুমবার্গে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের দিকগুলো নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ১৭ই সেপ্টেম্বর থেকে ইসরায়েলের হামলা এবং হিজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়ার ফলে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ২০০৬ সালের পর থেকে যা উভয় পক্ষের মধ্যে ঘটা সবচেয়ে বড় সামরিক সংঘর্ষের ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদনেটিতে নাসার ‘ফির্মস’ মডেলের স্যাটেলাইটের সাহায্যে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়। এতে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলেই অধিকাংশ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় এপর্যন্ত ৭০০ জনেরও বেশি লেবানিজ নিহত হয়েছেন। এবং ইতিমধ্যেই প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ পাশ্ববর্তী দেশ সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
বিভিন্ন দেশের সামরিক হামলার বিশ্লেষক সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা (এসিএলআইডি) এর তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে হিজবুল্লাহ এর পাল্টা আক্রমণ হিসেবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।
ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত সপ্তাহে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর প্রায় অর্ধেক স্বল্পপাল্লা এবং মাঝারিপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর আক্রমণের পরিসংখ্যানে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে। একদিকে ইসরায়েল অনেক বেশি আক্রমণ করেছে, অন্যদিকে হিজবুল্লাহর নিয়মতান্ত্রিক আক্রমণের সংখ্যা ইসরায়েলের তুলনায় অনেক কম।
এদিকে চলমান সংঘাতে হিজবুল্লাহর প্রায় সবক’টি রকেট ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে পরাস্ত করতে সক্ষম হলেও বর্তমানে হিজবুল্লাহর বেশ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে। সম্প্রতি হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ড এ সংঘাতের এক বড় দূর্টঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল জানিয়েছে, তদেরকে দেওয়া তিন সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তারা সম্মত নয়। যদিও এই প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব দেশগুলো সমর্থন জানিয়েছিল। উল্টো ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেনগভির সম্প্রতি হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি কোন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি করা হয়, তাহলে তিনি বর্তমান সরকারী পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।
তবে হিজবুল্লাহকে লেবাননের সীমান্ত থেকে অন্তত ৫ কিলোমিটার দূরে সরানোর জন্য ইসরায়েলের স্থল অভিযানের পরিকল্পনা এবং আলোচিত সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির আগে সামরিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করা সেটা ইসরায়েল লেবাননের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনার আগুনে অনবরত ঘি ঢালছে।
তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ