আজ ১লা অক্টোবর ভোর থেকে দক্ষিণ লেবাননে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী একটি পরিকল্পিত স্থল অভিযান শুরু করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানিয়েছেন, দক্ষিণ লেবাননে সামরিক উপস্থিতি শক্তিশালী করা এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোই এই অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ পরিকল্পনা ও সাম্প্রতিক মাসগুলোয় প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত ফলাফলস্বরূপ এই অভিযান শুরু হয়েছে।
সমন্বিত সামরিক অভিযান
হ্যাগারি জানান, স্থল অভিযানের পাশাপাশি বিমান এবং আর্টিলারি ইউনিটের সমন্বিত আক্রমণ চলবে। এই আক্রমণে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা অন্যতম লক্ষ্য। পুরো অভিযানের প্রতটি ধাপ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুমদোন অনুযায়ী পরিচালনা করছে আইডিএফের পদাতিক ডিভিশন।
অভিযানের সময়সীমা ও অন্যান্য ফ্রন্টের প্রভাব
এসময় হ্যাগারি অভিযানের সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে গিয়ে বলেন, উত্তর সীমান্তের এই অভিযান গাজা এবং অন্যান্য ফ্রন্টগুলোর সাথে সমন্বিত আকারে চলবে। ইসরায়েলি বাহিনীর এই পদক্ষেপ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তুত করা বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।
স্থল অভিযানে মার্কিন প্রতিক্রিয়া
এদিকে ইসরায়েলের স্থল অভিযানের পূর্বে গতকাল সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, ইসরায়েল সীমিত আকারে লেবাননে পরবর্তী ধাপের সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। এবং ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা (ক্যাবিনেট) সোমবার রাতে এটির অনুমোদন দিয়েছে।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী মেতুলা, মিসগাভ আম, এবং কফার জিলাদি এলাকাগুলোকে সামরিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং এসব এলাকাগুলোতে ইসরায়েল ধারাবাহিক বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য হামলার আগে নিয়ম রক্ষার জন্য দক্ষিণ লেবাননের বেশ কয়েকটি অঞ্চলসহ বৈরুতের দক্ষিণাংশের বাসিন্দাদের এলাকাত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল পূর্বেও লেবাননে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালিয়েছিল। লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানগুলোর ইতিহাস থেকে বোঝা যায়, ১৯৭৮, ১৯৮২ এবং ২০০৬ সালের প্রতিটি আক্রমণে ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ লেবাননে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করা। এরমধ্যে ১৯৮২ সালের অভিযানে ইসরায়েল বৈরুত পর্যন্ত অগ্রসর হতে পেরেছিল, আর ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সাথে সংঘাতে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো স্থল হামলা চালায়।
উপসংহার
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক এই নতুন অভিযান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কী হতে পারে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ইসরায়েল-লেবানন সংঘাতের পূর্ব ইতিহাস বলে, এই ধরনের অভিযান আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ায় এবং আরও বড় ধরনের সংঘর্ষের জন্ম দেয়।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, আল-আরাবি আল-জাদীদ