সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সমালোচিত একটি বিষয় ইসরায়েলের গোয়েন্দা কার্যক্রম। বিশেষ করে হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা সব খানেই।
হামাসের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা
গত দুই দশক ধরে ইসরায়েল তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সংঘর্ষের প্রস্তুতির দিকে মনোনিবেশ করেছিল। হামাস সম্পর্কে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সূত্রগুলো ছিল একেবারে বেখবর। অন্যদিকে এই সুযোগ হামাস কাজে লাগিয়ে পূর্ণ গোপনীয়তার সাথে দীর্ঘ পরিকল্পনা সাজায়। এবং গত বছরের ৭ই অক্টোবর তুফানুল আকসা নামে ইসরায়েলের উপর প্রচণ্ড এক আক্রমণ করে বসে । ইতিহাসে প্রথমবার সেটি এমন কোন আক্রমণ ছিল যার ব্যাপারে ইসরায়েলের কাছে কোন আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিলনা। কারণ, ইসরায়েলের গোয়েন্দারা ৭ই অক্টোবর হামাসের এই হামলার কোন পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। ৭ই অক্টোবরের আগে খোদ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু পর্যন্ত ভেবেছিলেন হামাস গাজার স্থিতিশীলতা রক্ষাতেই বেশি মনযোগী , অবশ্য হামাসও তার কার্যকলাপে তেমনটিই ফুটিয়ে তুলেছিল। এব্যাপারে তেল আবিবের জাতীয় নিরাপত্তা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক কারমিত ফালেন্সি বলেন ‘আমাদের একটি বড় অংশ হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রস্তুতির দিকে মনোনিবেশ করেছিল, এবং আমরা হামাস এবং গাজার পরিস্থিতিকে কিছুটা উপেক্ষা করেছিলাম।’
অথচ তুফানুল আকসা অভিযানের জন্য হামাসের প্রস্তুতির খবর ইসরায়েলের কাছে ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই প্রশিক্ষণের গুরুত্বকে হালকাভাবে নিয়েছিল। তারা মনে করেছিল এটি কেবল একটি সামরিক শক্তির প্রদর্শনী মাত্র। সেই সাথে গাজাকে ইসরায়েলের এলাকা থেকে বিচ্ছিন্নকারী দেয়ালের সুরক্ষা নিয়ে সেনাবাহিনী অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল। তাই ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দিকে তেমন একটা ভ্রুক্ষেপ করেনি। ফলে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস ইসরায়েলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সাফল্য
অপরদিকে, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে বেশ সফল বলা যায়। এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক পরিচালক অ্যাভনির গুলোভ বলেন, ‘ইসরায়েলি নিরাপত্তা নীতির মূল ধারণা হল যুদ্ধকে শত্রুর অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া।’ এ নীতির অনুকরণেই ইসরায়েল হিজবুল্লাহর নেতাদের বিরুদ্ধে গোপন অপারেশনগুলো চালিয়েছে।
এছাড়া হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সফলতা এবং হামাসের কাছে ব্যর্থতার আরেকটি কারণ রয়েছে। ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা অঞ্চল থেকে একপাক্ষিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ায় এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অঞ্চলটি হস্তান্তর করার কারণে হামাসের কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা ইসরায়েলের জন্য তুলনামূলক কঠিন। তাই ইসরায়েল হামাস সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।
ইসরায়েলের এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা উজি শায়া এ বিষয়ে বলেন, লেবানন বা অন্য কোন দেশে হিজবুল্লাহর সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের অপারেট করা হামাসের কাউকে অপারেট করার চেয়ে অনেক সহজ।
কারণ, গাজায় বসবাসের ঘনত্ব এত বেশি যে, সেখানে বিদেশীদের আড়ালে থাকা একরকম অসম্ভব। বিপরীতে লেবানন এরকম নয়। এজন্যই হামাসের কার্যকলাপ নজরদারি করা ইসরায়েলের জন্য কঠিন। বিশেষ করে ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলের সৈন্য প্রত্যাহারের পর গুপ্তচরদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা তো আরও জটিল হয়ে গেছে।
উপসংহার
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাফল্য এবং হামাসের কার্যকলাপ নজরদারিতে ব্যর্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, ইসরায়েলের সিক্রেট সার্ভিসগুলো প্রতিরক্ষার তুলনায় আক্রমণে বেশি দক্ষ। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি ইসরায়েলের গোয়েন্দা কার্যক্রমকে নতুনকরে ভাবাতে পারে।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল