নিউজনেস্ট

আধাঘন্টায় ইরানের ২৫০টিরও বেশি মিসাইলে কেঁপে উঠলো ইসরায়েল

ইসরাইলের ওপর হিজবুল্লাহর উপুর্যপুরি হামলা
আধা ঘন্টায় ইরানের ২৫০টিরও বেশি মিসাইলে কেঁপে উঠে ইসরায়েল। ছবি : আল জাজিরা

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইরান ইসরায়েলের উপর নজিরবিহীন এক রকেট হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী ইসরায়েলের দিকে একসঙ্গে ২৫০টিরও বেশি ব্যালেস্টিক মিসাইল ছুঁড়ে, যার ফলে ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে এবং জনগণকে বাংকারে আশ্রয় নিতে বলা হয়। এই হামলার ফলে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

হামলার পটভূমি ও ইরানের বিবৃতি

ইরানের বিপ্লবি গার্ড বাহিনী জানিয়েছে, এই হামলা দখলকৃত ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। ইরান বলছে, এই অভিযান ইসমাইল হানিয়া ও হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদতের প্রতিশোধ। সম্প্রতি ইসরায়েলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হন। এর জবাবেই এই বড় আকারের আক্রমণ শুরু করা হয়েছে বলে জানায় ইরান। তারা আরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়ার জবাবে আরও বড় আক্রমণ চালানো হবে।

ইসরায়েলের অবস্থা ও প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, মিসাইল হামলার পরপরই ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে সাইরেন বেজে ওঠে, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দেয় এবং সকল ফ্লাইটকে বিকল্প বিমানবন্দরে পাঠানো হয়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, এই হামলায় তেল আবিবের একটি ভবনে সরাসরি আঘাত হানে একটি মিসাইল, যার ফলে তিনজন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, এই হামলার জবাবে তারা কঠোর আক্রমণ পরিচালনা করবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা হামলার সময় জেরুজালেমে একটি সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করেন।

ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি বলেন, ‘এই আক্রমণের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব থাকবে। আমরা পাল্টা হামলার পরিকল্পনা করছি এবং সঠিক সময়ে জবাব দেব।’

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইরানের এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের সহায়তায় মার্কিন সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরান থেকে ছোঁড়া কয়েকটি মিসাইল তারা সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া

ইরানের মিসাইল হামলা শুধুমাত্র ইসরায়েলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এর প্রভাব আশপাশের দেশগুলিতেও অনুভূত হয়েছে। জর্ডানের বিভিন্ন এলাকায় ইরানি মিসাইল ও ড্রোন প্রতিরোধ করার সময় ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এই আক্রমণকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, ইরানের এই আক্রমণ ইসরায়েলি আগ্রাসনের সঠিক জবাব।

ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ইরানের ছোঁড়া প্রায় ৮০টি মিসাইল তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তারা আরও জানায়, নতুন একটি মিসাইল হামলার প্রস্তুতি চলছে এবং তা শিগগিরই ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চলে আঘাত হানবে।

উপসংহার

ইরান ও ইসরায়েলের এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার সূচনা করেছে। ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তাদের এই আক্রমণ ছিল মাত্র শুরু এবং ইসরায়েলের যেকোনো পাল্টা আক্রমণ আরও শক্তিশালী প্রতিরোধের মুখে পড়বে। এদিকে ইসরায়েলও নিজেদের প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন এই সংঘাত কীভাবে সমাধান হবে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ এটি পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত