গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী দ্বারা পরিচালিত গণহত্যা ৩৬০তম দিনে পদার্পণ করেছে।
সম্প্রতি গাজার সরকারি তথ্য অফিস যুদ্ধের সর্বশেষ একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। যা এই যুদ্ধ ও গণহত্যার ভয়াবহতাকে তুলে ধরে।
৩৬০ দিনের যুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যায় সর্বমোট ৪১,৬১৫ জন মানুষ শহীদ হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছে আরও ১০,০০০ । গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ।
শিশু ও নারীদের বিপর্যয়কর পরিণতি
গণহত্যায় শিশুদের ওপর প্রভাব ছিল সবচে’ ভয়াবহ। ইসরায়েলি আগ্রাসনে এপর্যন্ত ১৬,৮৯১ জন শিশু শহীদ হয়েছেন। এরমধ্যে ১৭১ জন নবজাতকসহ ৭১০ জন এক বছরের কম বয়সী শিশুও রয়েছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে এপর্যন্ত নারী শহিদ ১১,৪৫৮ জন। যার মধ্যে ৯৮৬ জন ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৮৫ জন ছিলেন সিভিল ডিফেন্স কর্মী।
বাদ যাচ্ছেনা সাংবাদিক ও স্থ্যকর্মীরাও
গণহত্যা চলাকালে ১৭৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৩৯৬ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী। এছাড়াও ৩১০ জন সাস্থ্যকর্মী এবং ৩৬ জন প্রসিদ্ধ সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।
গণকবর আবিষ্কার
হাসপাতালের ভিতরে দখলদার বাহিনী কর্তৃক তৈরি করা ৭টি গণকবর, এবং সেখান থেকে ৫২০ জন শহীদকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আহত ও রোগাক্রান্ত মানুষের করুণ অবস্থা
গাজা গণহত্যায় এপর্যন্ত আহত মানুষের সংখ্যা ৯৬,৩৫৯ জনে পৌছেছে। এদের মধ্যে ১২,০০০ জনের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন। এছাড়াও চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মৃত্যুর সম্মুখীন ১০,০০০ জন ক্যান্সার রোগী। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৩,০০০ রোগীর বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন। স্থানাচ্যুতির কারণে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ১,৭৩৭,৫২৪ জন মানুষ। এত সংক্রামক রোগীর মধ্যে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ৭১,৩৩৮ জন। এর সাথে চিকিৎসার অভাবে ধুকছে ৬০,০০০ গর্ভবতী নারী এবং ৩৫০,০০০ জন দীর্ঘমেয়াদী রোগী।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধ্বংস
ইসয়ার্যেলি আগ্রাসনের ফলে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে গাজার শিক্ষাব্যবস্থা। ১২৫টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ৩৩৭টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিষ্ঠুর হামলায় এপর্যন্ত ১১,৫০০ জন শিক্ষার্থী,৭৫০ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। ১১৫ জন স্কলার, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষককেও ইসরায়েলি বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ৬১১টি মসজিদ পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ২১৪টি মসজিদ আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে। ধ্বংসের কালো হাত থেকে রেহাই পায়নি ৩টি গির্জাও।
বাস্তচ্যুত সহস্র মানুষ
ইসরায়েলি আগ্রাসনের পুরো সময়জুড়ে গাজা উপত্যাকায় বাস্তচ্যুত হয়েছে ২ মিলিয়ন মানুষ। ১০০,০০০ টিরও বেশি তাঁবু বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১৫০,০০০ বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে ৮০,০০০ বাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আরও ২০০,০০০ বাড়ি। মানবিক এই বিপর্যয়ের মধ্যে ২৫,৯৭৩ জন শিশু তাদের বাবা-মা বা তাদের একজনকে হারিয়েছে, পাশাপাশি ৩,৫০০ জন শিশু অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের কারণে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে।
অবকাঠামোর ধ্বংসযজ্ঞ
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গাজার অবকাঠামোরও। ইসরায়েলি বাহিনী ৩,১৩০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ৩৩০,০০০ মিটার পানি সরবরাহ লাইন, এবং ৬৫৫,০০০ মিটার স্যুয়ারেজ লাইন ধ্বংস করেছে। ২,৮৩৫,০০০ মিটার রাস্তা এবং ৩৬টি খেলার মাঠ ও ক্রীড়াকেন্দ্র ধ্বংস করেছে। এছাড়া, ৭০০টি পানি কূপ অকার্যকর করে দিয়েছে এবং ৮৬ শতাংশ গাজার এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে।
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবার সংকট
ইসয়ারায়েলি আগ্রাসনে বাদ যায়নি হাসপাতালও। ৩৪টি হাসপাতাল এবং ৮০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংস বা অকার্যকর করে দিয়েছে ইসরায়েল। সেইসাথে ১৬২ টি স্বাস্থ্য সংস্থাও ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৩১টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস করা হয়েছে। হামলার ফলে এখন ৬০,০০০ গর্ভবতী নারী এবং ৩,৫০০ জন শিশু চিকিৎসার অভাবে বিপদের মুখোমুখি।
ইসরায়েলের চালানো বহুমাত্রিক আগ্রাসনের এই পর্যায়ে গাজার অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রাথমিকভাবে ৩৩ বিলিয়ন ডলার বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র:আল ইলামুল আসকারি