নিউজনেস্ট

যেভাবে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাস্ত করলো ইরান

সামরিক শক্তিতে কি কি মিসাইলের অধিকারী ইরান?
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ইসরায়েলের উপর ইরান যে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তা আধুনিক ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুনকরে প্রশ্ন তুলে ধরেছে। ব্রিটিশ পত্রিকা টেলিগ্রাফ এবং গার্ডিয়ান এই প্রশ্নের উপর এক বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে উঠে এসেছে ইরানের সামরিক প্রযুক্তির উন্নতি, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যতে সংঘর্ষের সম্ভাব্য ফলাফল।

ইরানের ব্যাপক আক্রমণ

সম্প্রতি ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও কামিকাজি ড্রোনের  এক বিশাল আক্রমণ চালিয়েছে। এর মধ্যে সোমবার রাতে প্রায় ১৮০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ইসরায়েলের আকাশে ছোঁড়া হয়। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে সক্ষম হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের কয়েক স্তর বিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে আঘাত হানে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে। যা বিশেষজ্ঞদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ইরান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রোলিফারেশন এর বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল হিকি বলেন, ‘ইরানের এমন আক্রমণ অত্যন্ত বিস্ময়কর। কারণ, ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন হওয়ায় সেগুলো আটকানো ইসরায়েলের জন্য কঠিন হয়ে যায়।’

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হলেও, এতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষত তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় সমস্যা হলো সীমিত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের ক্ষমতা। গার্ডিয়ানের রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি ইরান ভবিষ্যতে বড় পরিসরের আক্রমণ চালায়, তবে ইসরায়েলকে তার ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পূর্ণ ব্যবহার করতে হতে পারে, যা দেশটির জন্য অর্থনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করবে।

তাছাড়া ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ক্ষেপণাস্ত্র -যেমন: ‘হেতস’এর একটির খরচ প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ‘ডেভিড স্লিং’ নামক আরেক ক্ষেপণাস্ত্রের খরচ ১ মিলিয়ন ডলার। অথচ ইরানের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের খরচ মাত্র ১ লাখ ডলার। সুতরাং বড় সংঘর্ষে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কতটা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা

ইরান এই হামলায় শব্দের চেয়ে ছয়গুণ গতিসম্পন্ন ‘ইমাদ’ এবং ‘কাদের’ নামক উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে দেশটির বিভিন্ন অংশে আঘাত হেনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করার সামান্য প্রচেষ্টা মাত্র। এছাড়াও ইরানের কাছে এখনো প্রায় ৩ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যা ভবিষ্যত সংঘাতে ইসরায়েলের জন্য বড় এক হুমকি হতে পারে।

হামলায় ইরানের কৌশলগত লক্ষ্য

ইরান এই বিশাল আক্রমণ কেবল ইসরায়েলকে সামরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করেনি। এই হামলার একটি উদ্দ্যেশ্য ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করাও ছিল। ইরান মূলত ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরখ করে কৌশলগতভাবে বড় আঘাত হানার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আক্রমণ আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। বিশেষত সংঘর্ষের পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে।

সুতরাং এটা স্পষ্ট, ইরানের সাম্প্রতিক আক্রমণ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। বিবদমান উভয়পক্ষের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির ভারসাম্যহীনতা এবং ভবিষ্যতে সংঘাতের জোর সম্ভাবনা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত