স্বরণকালের সবচেয়ে সংকটে ভুগছে ইসরায়েলের প্রযুক্তি খাত। যা দেশটির অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের উন্নত প্রযুক্তি শিল্প সমিতি (আইএটিআই) এবং ইসরায়েলি গবেষণা ও নীতি ইনস্টিটিউট (আরআইএসই) যৌথভাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই সংকটকে বড় ধরনের ঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদটিতে ইসরায়েলের প্রযুক্তি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগের পতন এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিনিয়োগের পতন
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলি কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যা উল্লেখযোগ্য একটি পতন। এছাড়াও এই খাতে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে ৩০ শতাংশ।
এই পরিসংখ্যান প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার একটি স্পষ্ট প্রমাণ। এক হিসেবে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ইসরায়েলের প্রযুক্তি খাতে মোট বিনিয়োগের প্রায় ৫০% মাত্র ১০টি কোম্পানির মধ্যে কেন্দ্রীভূত ছিল। যার মানে দাড়ায়, ইসরায়েলের জন্য বড় বেকারত্ব সমস্যা অপেক্ষা করছে। কারণ শুধুমাত্র ইসরায়েলের মেগা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ পাওয়া তুলনামূলক ছোট কোম্পানিকে সঙ্কটে ফেলবে।
এদিকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ পাওয়া ৭৬ শতাংশ কোম্পানিরই প্রধান কার্যালয় ইসরায়েলের বাইরে অবস্থিত। ফলে দেশটির প্রযুক্তি খাতে প্রতিযোগিতা ও সক্ষমতা ধরে রাখা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে প্রতিযোগিতা হ্রাস
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতেও ইসরায়েলের অবস্থান ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা ‘টরটয়েয’ কর্তৃক প্রকাশিত বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে, ২০২৩ সালে ইসরায়েল সপ্তম স্থান থেকে নবম স্থানে নেমে গেছে, যেখানে ২০২১ সালে দেশটি পঞ্চম স্থানে ছিল। যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের পিছিয়ে পড়ার স্পষ্ট প্রমাণ। অথচ এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বৈশ্বিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র।
স্টার্টআপগুলির জন্য কঠিন সময়
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রাথমিক বিনিয়োগ সংগ্রহ করা কোম্পানি তথা স্টার্টআপের প্রায় ৫০ শতাংশ এখন পরবর্তী অর্থ সংগ্রহে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যা ইসরায়েলের স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি ও স্থায়িত্বকে বড় ধরনের হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে।
ভবিষ্যৎ হুমকি
ইসরায়েলি গবেষণা ও নীতি ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী উরি গ্যাবাই এই সংকটকে “বিক্ষুদ্ধ ঝড়” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ” চলমান যুদ্ধ ইসরায়েলের প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। যদিও শিল্পের কিছু ক্ষেত্রে স্থিতিস্থাপক ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তাতে ভবিষ্যতের জন্য অনেক সতর্কতামূলক সংকেত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সরকারকে অবশ্যই দায়িত্বশীল অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করতে হবে, এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি স্বচ্ছ অবস্থান তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দেশের প্রযুক্তি খাতকেও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে, দেশের উচ্চ প্রযুক্তি খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে, যা ইসরায়েলের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link