মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি সামরিককৌশল বিশেষজ্ঞ কর্নেল হাতেম আল-ফালাহি জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ভারকান’ নামক ক্ষেপণাস্ত্র, যা হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগারে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
‘ভারকান’ ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি ভারী ও স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। যা ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূর থেকে বিস্ফোরক বহন করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আল-ফালাহির মতে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলের দখলকৃত ভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি স্থির কিংবা চলমান উভয় প্ল্যাটফর্ম থেকেই নিক্ষেপ করা যায়।
সম্প্রতি, হিজবুল্লাহ সাসা অঞ্চলে ইসরায়েলি সেনা ও বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জামাদির উপর ভারি ভারকান ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার দলটি সীমান্তের কাছে দুটি অভিযানে ইসরায়েলি সৈন্যদের হত্যা এবং হাইফা ও গ্যালিলের উত্তরে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথাও জানিয়েছে। হিজবুল্লার এই হামলার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
হিজবুল্লাহর রকেটের লাগাতার নিক্ষেপ
এদিকে কর্নেল আল-ফালাহি তার বিশ্লেষণে হিজবুল্লাহর কাছে বিশাল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রয়েছে বলেও জানান। ভবিষ্যতে যা তারা আরও বেশি মাত্রায় ব্যবহার করতে পারে।
এদিকে হিজবুল্লাহ গত বছরের অক্টোবর থেকেই ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আসছে এবং সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতেও সক্ষম হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, হিজবুল্লাহ এখনও তার সমস্ত শক্তি প্রকাশ করেনি। বিশেষত তাদের দূরপাল্লার সুনির্দিষ্ট উচ্চগতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এখনও পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়নি। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার জন্য হিজবুল্লাহ এখনো কৌশলগত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে।
ইসরায়েলের জন্য বিপদ
আল-ফালাহির মতে, হিজবুল্লাহর বর্তমান সামরিক ক্ষমতা ইসরায়েলি বাহিনীকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। বিশেষ করে, হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমকে অতিক্রম করার সক্ষমতা রাখে, যা ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট তৈরি করেছে। ফলে ইসরায়েল যদি লেবাননের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে, তবে তারা ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়বে। বিশেষ করে লেবাননের পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশের জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর বড় সংখ্যক সেনার প্রয়োজন হবে, যা তাদের বর্তমান সামরিক সক্ষমতার বাইরে।
কারণ, হিজবুল্লাহর নতুন অস্ত্রাগারের মুখোমুখি হচ্ছে গাজায় ইতোমধ্যেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ইসরায়েলি বাহিনী। যা ইসরায়েলিদের সামরিক কৌশলকে আরও জটিল করে তুলবে।
মোটকথা হিজবুল্লাহর সামরিক শক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতি এবং নতুন অস্ত্রের ব্যবহার ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হিজবুল্লাহর কৌশলগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতে এই সংঘাত কতটা তীব্র হবে। তবে এতটুকু নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা নতুন দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা