নিউজনেস্ট

কেমন হবে আমাদের কবরের জীবন

কেমন হবে আমাদের কবরের জীবন
কেমন হবে আমাদের কবরের জীবন। ছবি: আল মাউদু

মানুষের মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর পর মানুষকে অতিক্রম করতে হবে কয়েকটি ভয়াবহ কঠিন জায়গা। সেই ভয়াবহ কঠিন জায়গার একটি হচ্ছে কবর। মৃত্যুর পর মানুষ হবে কবর জগতের বাসিন্দা। কবরের জীবন কেমন হবে তা নিয়ে সকলেরই কৌতূহল থাকে। কুরআন সুন্নাহে কবর জীবনের ব্যাপারে এসেছে বিশদ বিবরণ।

  • কবরের আলিঙ্গন

হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কবর মৃত ব্যক্তিকে এমনভাবে আলিঙ্গন করবে, মৃত ব্যক্তির পাঁজরগুলি সরে যাবে। এর থেকে কেউ রেহাই পাবেনা। বিষয়টি আল্লাহর রাসুলের আরেকটি বাণী দ্বারা বুঝা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সাদ বিন মুআযন- যার জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল এবং আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল এবং যার মৃত্যুতে সত্তর হাজার ফেরেশতা তাঁর জানাজায় অংশগ্রহন করেছে তাঁকেও কবর চাপ দিয়েছিল। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যদি কেউ কবরের আলিঙ্গন থেকে রেহাই পেত তাহলে, সাদ বিন মুআয রেহাই পেত । কবরের আলিঙ্গন একজন যত্নশীল মায়ের আলিঙ্গনের মতো নয়,  কারণ যদি এমনই হত তবে আল্লাহর রসূল সাদ-এর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতেন না। তবে আমলের পার্থক্যের  কারণে আলিঙ্গনের ধরণ পরিবর্তিত হয়ে থাকে।

  • ফেরেশতাদের প্রশ্ন

বারা ইবনে আযেব রাযি আল্লাহু আনহু. রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, কবরে মুমিন বান্দার নিকট দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসাবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করবে, তোমার প্রতিপালক কে? সে বলবে, আমার প্রতিপালক আল্লাহ। তারপর জিজ্ঞেস করবে, তোমার দ্বীন কি? সে বলবে আমার দ্বীন ইসলাম। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হবে, এই যে লোকটি তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিল তিনি কে? সে বলবে তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । তখন ফেরেশতাগণ  তাকে বলেন, তুমি কিভাবে তা জানতে পারলে? সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি। তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাকে সমর্থন করেছি। এরপর নবী করীমসাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াত তেলাওয়াত করেন,يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ امَنُوْا بِاالْقَوْلِ الثّابِتِ (অর্থ)‘যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে আল্লাহ্ তাদেরকে আল্লাহ কালেমা শাহাদাতের উপর অটল রাখবেন’ (ইবরাহীম ২৭)। আয়াতটি তেলাওয়াতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রশ্নোত্তর পর্ব সঠিকভাবে শেষ হলে আকাশ থেকে আল্লাহ্ তাআলা বলবেন, আমার বান্দা সঠিক বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য কবর হতে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। সুতরাং তার জন্য তাই করা হবে। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ফলে তার দিকে জান্নাতের সুগন্ধি আসতে থাকবে এবং জান্নাতের দরজা তার দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। এরপর নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদ্বীনের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তার আত্মাকে তার দেহে ফিরিয়ে আনা হবে। তারপর দু’জন ফেরেশতা তাকে উঠিয়ে বসাবে এবং একই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করবে। তোমার প্রতিপালক কে? তখন সে বলে হায়! আমি তো কিছুই জানি না। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করবে, তোমার দ্বীন কি? সে পুনরায় বলবে হায়! আমি তো কিছুই জানি না। তারপর আমার দিকে ইশারা করে বলা হবে, এই লোকটি কে? যিনি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন। সে তখন আবার বলবে হায়! আমি তো কিছুই জানি না। তখন আকাশ থেকে একজন আহবানকারী বলবে, সে মিথ্যা বলেছে। তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও। তারপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তখন তার দিকে জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন তার দিকে জাহান্নামের লু হাওয়া আসতে থাকবে। এছাড়া তার কবরকে এত সংকীর্ণ করে দেয়া হবে যাতে তার এক দিকের পাঁজর আর এক দিকের পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যাবে। অতঃপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হবে। ফেরেশতার সাথে এমন এক লোহার হাতুড়ি থাকবে যদি সেই হাতুড়ি দ্বারা কোন পাহাড়কে আঘাত করা হয়, তাহলে পাহাড়ও ধূলিকণায় পরিণত হয়ে যাবে। ফেরেশতা সেই হাতুড়ি দ্বারা তাকে এত জোরে আঘাত করবে যে, আঘাতের ফলে সে এত বিকট চিৎকার করবে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত পৃথিবীর সব কিছুই তা শুনতে পাবে। আঘাতের পর সে মাটির সাথে মিশে যাবে। তবে সে এতে মারা যাবেনা  তার দেহে আবার আত্মা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর এভাবেই তার শাস্তি চলতে থাকবে। উক্ত হাদিসটি মুসনাদে আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩১ তে উল্লেখ রয়েছে।

এই হাদিস দ্বারা প্রতিয়মান হয়, কবরে থাকতেই মানুষের শাস্তি শুরু হবে।

কবরের আযাব থেকে বাঁচতে করণীয়

  • প্রত্যেক সালাত আদায় করার পর কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।
  • প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সূরা আল-মুলক পাঠ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এই সুরাটি বরকতময় কারণ, এই সূরা কবরের আযাব থেকে রক্ষা করে।

মোটকথা কবর এমন এক নির্জন ঘর যেখানে আমাদের কোন সহযোগী থাকবে না। ঠিক যেমন নদীর স্রোত একবার চলে গেলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়,তেমনিভাবে আমাদের শ্বাস-নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে ভুলের সংশোধন করা সম্ভব নয়। তাই আসুন! এখনই আমরা আমাদের রবের নিকট ফিরে আসি এবং কবরের প্রস্তুতি গ্রহন করি।

সূত্র : আল মাউদু

নুর মোহাম্মাদ
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত