এক বছর হতে চলল গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের। এক বছর উপলক্ষে বিশিষ্ট আইনজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞ ‘ফয়সাল কুটি’ বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা দেশগুলোর ভণ্ডামি ও আন্তর্জাতিক আইনের ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন স্পষ্ট ভাষায়। তিনি মনে করিয়ে দেন, পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষপাতমূলক নীতির কারণে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষা করার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতি ও ক্ষমতার চাপে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
ফয়সাল কুটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেলের বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘গাজা মানবিক আইনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতির কবরস্থান।’ সাথে ফয়সাল যোগ করেন, ‘এটি শুধু মানবিক আইন নয়, বরং পশ্চিমা নীতিরও কবরস্থান।’
পশ্চিমা সরকারের পক্ষপাত ও আন্তর্জাতিক আইনের অবহেলা
ফয়সাল কুটি বলেন, পশ্চিমা সরকারগুলো ইসরায়েলের অপরাধকে উপেক্ষা করে আত্মরক্ষার অজুহাতে তাদেরকে সমর্থন দিয়ে আসছে। যুদ্ধ লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং ইরানেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করেই চলছে। তার মতে আন্তর্জাতিক আইন এখন আর আইন ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয়; এটি কেবল ‘একটি গোষ্ঠী’র ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।
মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা
অন্যদিকে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর চলমান সংঘাতের কভারেজে উপেক্ষিত হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের মানবতা। ফয়সাল কুটি উল্লেখ করেন, পশ্চিমা মিডিয়া ইসরায়েলি সৈন্যদের ক্ষেত্রে ‘হত্যা করা হয়েছে’ ব্যবহার করছে কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ‘মারা যাচ্ছে’ ব্যবহার করছে। আবার ইসরায়েলি বন্দিদের ‘অপহরণকৃত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, ফিলিস্তিনি বন্দিদের (যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও) বলা হচ্ছে ‘বন্দি’।
এদিকে আবার ইসরায়েল বিরোধী মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করতে পশ্চিমা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আইন প্রণয়ন করছে, যা ইসরায়েলের নীতির বিরোধিতা করা ইহুদিদের পর্যন্ত নিশানা করছে।
এক বছরের এই যুদ্ধে ইসরায়েল গাজায় সবকিছু ধ্বংস করে ফেলেছে
গাজায় ইসরায়েল এপর্যন্ত ৩,৬২৮টি গণহত্যা ঘটিয়েছে। শুধু হাসপাতালে পৌঁছা শহিদের সংখ্যাই ৪১,৬১৫ জন। আহত ৯৬,৩৫৯ জন। ৯৮৬ জন চিকিৎসা কর্মী শহিদ। সাংবাদিক শহিদ ১৭৪ জন । হতাহতের ৬৯ শতাংশই শিকার শিশু ও নারী। ১১,৪৫৮ জন নারী শহীদ। এমন পরিসংখ্যান পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যাবে। কিন্তু পশ্চিমাদের হঠকারি নীতির কারণে কলমের কালি শুকানোর পূর্বেই নতুন রক্তের পরিসংখ্যান লিখতে হবে কলমকে।
দুই রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবতা
পশ্চিমারা বারবার দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কথা বলে। অথচ ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ এবং গাজায় নির্দয় আগ্রাসনের ফলে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রায় অবাস্তব হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে ৮ লাখ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এমন রয়েছে, যাদের সরিয়ে নেয়া প্রায় অসম্ভব। উল্লেখিত পরিসংখ্যানের আলোকে কুটি মনে করেন, এই পরিস্থিতি পশ্চিমা দেশগুলো ব্যর্থতা স্পষ্টরূপে তুলে ধরেকরতে বাধ্য করবে।
আশা ও উদ্দীপনা
সবকিছুর পরও, ফয়সাল কুটি আশা করেন যে, প্রকৃত মানবাধিকার রক্ষাকারীরা পশ্চিমা দেশগুলোতে বেঁচে আছেন। ফয়সালের মতে, ফিলিস্তিনি ও ইহুদি ছাত্র-ছাত্রী, যারা নিজেদের পেশাগত জীবন ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন, তারা এই সংকটের আলো দেখাচ্ছেন। ফয়সাল কুটি বলেন, ‘যদিও উদারনীতি পথ হারিয়েছে, কিন্তু মানুষ তা হারায়নি।’
সূত্র: নিউজ উইকের বরাতে আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link