ফেব্রুয়ারি মাসের কোন এক দিন। অন্যসব দিনের মত এই দিনটি স্বাভাবিক হলেও উত্তর গাজার মানুষের কাছে দিনটি ছিল শোকাচ্ছন্ন। এই দিন উত্তর গাজার জন জীবনে একটি ঝড় আঘাত হানে। মোহাম্মদ আল মাগারির ছেলে ১৭ বছর বয়সী নাইফ, ইসরায়েলি সেনাদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়। গুলি শুধু তার শরীরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং উলট পালট করে দেয় তার পুরো জীবন। গুলির আঘাতে নষ্ট হয়ে যায় নাইফের পুরো কিডনি। মেরুদণ্ডে তৈরি হয় গভীর ক্ষত। শরীর হয়ে পড়ে কার্যত স্থবির।
নাইফের পিতা মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা ছেলেকে নিয়ে উত্তর গাজার আল আউদা হাসপাতালে গেলাম। অনেক আশা নিয়ে চিকিৎসা করালাম। কিন্তু কিছুদিন পর তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। আমার সামর্থ্য নেই ভালো চিকিৎসা করানোর। আর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও খুব দুর্বল। বর্তমান পরিস্থিতিতে নাইফের জন্য একটি আলাদা তাঁবুর দরকার। কিন্তু এখন সে ১১ জনেরও বেশি লোকের সঙ্গে একটি তাঁবুতে বাস করছে।’
বাধ্য হয়ে মোহাম্মদ ও তার পরিবার দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে হাসপাতালগুলোর দরজায় দরজায় ছুটে বেড়ালেও কেউ নাইফকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। চিকিৎসকদের একটাই কথা, ‘তোমার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে যাও।’ কিন্তু বিদেশে যাওয়ার খরচ তাদের মতো পরিবার কিভাবে বহন করবে? তবে মোহাম্মদের ভাঙা মন আবার একটুখানি আশার আলো দেখে, যখন তারা হাসপাতালে ছিল এবং হঠাৎ করে জার্মানির একটি প্রতিনিধি দল তাদের কাছে এসে নাইফের অবস্থা পর্যালোচনা করে। তারা নাইফকে বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করে।
কিন্তু বিধি বাম! রাফা সীমান্ত পেরোনোর আগেই ইসরায়েলি বাহিনী সেখানটা বন্ধ করে দেয়। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় নাইফের বিদেশে চিকিৎসা পাওয়ার শেষ আশাটুকুও। মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার চোখের সামনে ছেলের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু আমি কিছু করতে পারছি না।’
অন্যদিকে নাইফের জীবন প্রতিদিন যেন এক দুঃস্বপ্ন। এই যন্ত্রণার মধ্যে বেঁচে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না তার জন্য। নাইফ জানায়, ‘প্রতিদিন এই ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করি। প্রতিদিন যন্ত্রণায় কাঁদি। রাতে বৃষ্টি হলে বন্ধুরা আমাকে নিয়ে পাশের তাঁবুতে রাখে। কারণ, আমার প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল।’
অসুস্থ নাইফ একবার নয়, বারবার নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। কখনো চিকিৎসার আশায়, কখনো বন্ধুদের আশ্রয়ে। অথচ প্রতিটি নতুন দিন তার জন্য বয়ে আনে নতুন সংগ্রাম আর অমানবিক কষ্ট। কিন্তু এই দুর্দশার মধ্যেই নাইফ এবং তার পরিবার এখনো স্বপ্ন দেখে। হয়তো একদিন তারা শান্তি এবং মুক্তির আলো দেখতে পাবে।
আতাউল্লাহ আয়মান
- আতাউল্লাহ আয়মান#molongui-disabled-link
- আতাউল্লাহ আয়মান#molongui-disabled-link
- আতাউল্লাহ আয়মান#molongui-disabled-link
- আতাউল্লাহ আয়মান#molongui-disabled-link