গাজা ভূখণ্ডে এক বছরের যুদ্ধের ফলে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। পাশাপাশি অবকাঠামোয় নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের ফলে গাজা মানুষের বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, গাজার প্রায় ৬৬ শতাংশ ভবন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। যুদ্ধের ছাপ রয়েছে সর্বত্র—রাস্তা থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনা, এমনকি পানির কূপ পর্যন্ত কোনোকিছুই রক্ষা পায়নি।
মিশে গেছে বিভিন্ন এলাকা
গাজা জুড়ে বিভিন্ন এলাকা এখন শুধুই নির্মম ধ্বংসাবশেষ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১,৬৩,৭৭৮টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিমাল, ফুরকান, শেখ রিদওয়ান, নাসর, কারামা, আবসানের মতো সম্পূর্ণ বসতবাড়ি ও এলাকা একেবারে ধূলোয় মিশে গেছে। এসব এলাকায় এখন শুধুই মৃত্যুপুরীরর শূন্যতা খাঁ খাঁ করছে।
বাসস্থানের টাওয়ারগুলো ছিল লক্ষ্যবস্তু
ইসরায়েলি হামলার অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল আবাসিক টাওয়ার। মুকাবিলি, মাকুসি, আওদা, নাদা, কারামা এবং নাইফের মতো টাওয়ারগুলো গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া গাজার কেন্দ্রস্থল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত টাওয়ারগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেমন—আইন জালুত, জাকুত, তুর্কমানি এবং হামদ সিটির টাওয়ার।
অদৃশ্য কয়েকটি প্রধান রাস্তা
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার প্রধান সড়কগুলো, বিশেষ করে সালাহউদ্দিন ও রশিদ সড়ক। এছাড়া গাজার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, যেমন গালায়া, ওমর মুখতার, বাজার এলাকা এবং ত্রিশ নম্বর সড়কের চিহ্ন পর্যন্ত মুছে গেছে। সড়কগুলো পুনরায় গঠন করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
টার্গেট ছিলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ইসরায়েলের আক্রমণে প্রায় ৪৭৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা গাজার মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আল-আজহার, আল-আকসা, ইসরা, গাজা, আল-কুদস, ফিলিস্তিন এবং ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়। এসব আক্রমণের ফলে গাজার শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
অবকাঠামোয় তাতার-তাণ্ডব
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রায় ৬১০টি মসজিদ, তিনটি চার্চ, ২০০টি সরকারি ভবন এবং ১,৬৫,০০০ মিটার পানি নিষ্কাশনের পাইপলাইন ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬২টি সুপেয় পানির কূপ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। গাজার জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, কারণ এসব ক্ষতির ফলে পানির সংকট, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অন্যান্য চরম দুর্দশা বেড়েই চলছে।
যুদ্ধের এক বছর পরেও গাজার মানুষ ধ্বংসের সাথে যুদ্ধ করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং মানবিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: আল জাজিরা