নিউজনেস্ট

আমরা ব্যর্থ হয়েছি, আমাদের ভুল হয়েছে: সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি  

আমরা ব্যর্থ হয়েছি, আমাদের ভুল হয়েছে: সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি
আমরা ব্যর্থ হয়েছি, আমাদের ভুল হয়েছে: সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি। ছবি: কুদস নেটওয়ার্ক

২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর দিনটি দখলদার বাহিনীর জন্য একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। গতকাল সোমবার ৭ই অক্টোবরে সংঘটিত ঘটনার বর্ষপূর্তিতে ইসরায়েলি বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন এবং কৌশলগত পরাজয়ের কথা মেনে নিয়েছেন। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ নেতা তাদের ভুলের কথা স্বীকার করে, ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আমরা ব্যর্থ হয়েছি

ইসরায়েলি বাহিনীর প্রধান হার্জি হেলেভি ৭ই অক্টোবরের ঘটনার বর্ষপূর্তিতে বলেন, ‘পুরো এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু আমরা ইসরায়েলিদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি।’ হার্জি হেলেভির এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, ৭ই অক্টোবরের ঘটনার গুরুত্ব ইসরায়েলি বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের জন্য কতটা গভীর উদ্বেগের।

এদিকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারির বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী এখন নিজেদের ভুলের পুনঃমূল্যায়ন ও তার সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

হ্যাগারি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ হয়েছি, এবং আমাদের গুরুতর ভুল হয়েছে। আমরা এই ভুলগুলো পরবর্তীতে পর্যালোচনা করব।’

নেতানিয়াহুর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা

পাশাপাশি ইসরায়েলের রাজনৈতিক দল বেইতেনু পার্টির প্রধান আবিগডোর লিবারম্যানের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়, ইসরায়েলের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যস্ত ছিল এবং সমষ্টিগত দায়িত্ববোধের অভাব ছিল। বেইতেনু পার্টির প্রধান আবিগডোর লিবারম্যান ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্তথিতির জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘নেতানিয়াহু ও তার সহকর্মীরা ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক বিপর্যয়ের জন্য কোন দায় স্বীকার করেননি।’

যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতা

এদিকে গেল এক বছরে যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে সফলতা ব্যর্থতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে ইসরায়েলিদের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান তসাহি হানেগবি বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধে ইসরায়েল তার কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি।’ হানেগবির এই মন্তব্য প্রমাণ করে, চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতি ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

কৌশলগত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে ইসরায়েল

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের এক বছরে ইসরায়েলের অর্জন সম্পর্কে ইসরায়েলের সাবেক জেনারেল ইসরায়েল জিভ বলেন, ‘ইসরায়েল ধীরে ধীরে সাফল্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্র থেকে সরে গিয়ে এমন এক যুদ্ধে প্রবেশ করেছে, যেখানে ইসরায়েলকে সবাই চেপে ধরেছে।’ এই বক্তব্যে স্পষ্টতই বুঝা যায়, ইসরায়েল এখন আর আগাম সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে যুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তাছাড়া ইসরায়েলের সাবেক মন্ত্রী হাইম রামন তো সোজাসুজি বলেই দিয়েছেন, ‘ইসরায়েল একটি নজিরবিহীন কৌশলগত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।’

প্রতিরোধ ক্ষমতার পতন

এদিকে ইসরায়েলের সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রী মিকি জোহার বলেন, ‘আমাদের বলতেই হবে ইসরায়েল প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হারিয়েছে।’ যা প্রমাণ করে,  ইসরায়েলের শক্তি এবং ক্ষমতা এখন খোদ ইসরায়েলের হর্তাকর্তাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর উপর নজিরবিহীন চাপ

ক্রমাগত ব্যর্থতায় ইসরায়েলি বাহিনীর উপরও বাড়ছে চাপ। ইসরায়েলি বাহিনীর সাঁজোয়া যান বহরের প্রধান উরেন গিবার বলেন, ‘ইসরায়েলি সৈন্যরা যে পরিমাণ আগুনের মুখোমুখি হয়েছে, তা ইসরায়েলের সামরিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।’ এতে বোঝা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার পরিবেশে অভ্যস্ত নয় এবং তারা এই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

মোটকথা, ইসরায়েলের এই ব্যর্থতা এবং এর নেতৃবৃন্দের স্বীকারোক্তিগুলো প্রমাণ করে, দেশটি গুরুতর সংকটের মধ্যে রয়েছে। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ইসরায়েলি বাহিনীকে তার অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন মূল্যায়নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত