লেবাননে প্রতিদিনই ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের এসব আক্রমণের জবাব দিলেও কোন খোঁজ নেই লেবানিজ সেনাবাহিনীর। লেবানন একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হওয়া সত্ত্বেও লেবাননের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের কোন হামলার জবাব দিতে পারেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে হিজবুল্লাহর সাথে লেবানিজ সেনাবাহিনীর সম্পর্ক নিয়ে?
হিজবুল্লাহর সাথে জটিল সম্পর্ক
১৯৮৯ সালে হওয়া তায়েফ চুক্তি লেবানিজ সমস্ত দলকে নিরস্ত্র হওয়ার শর্তারোপ করে। যার কারণে সেই সময় লেবানিজ সেনাবাহিনীর সাথে হিজবুল্লাহর দূরত্ব তৈরি হয়।
কিন্তু ৯০ এর দশক থেকে সেনাবাহিনী ও হিজবুল্লাহর মাঝে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে থাকে। হিজবুল্লাহ তখন দক্ষিণ লেবাননে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরোধে অস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকে।
সময়ের ধারাবাহিকতায় হিজবুল্লাহর সামরিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা সংগঠনটিকে লেবাননের জাতীয় প্রতিরক্ষা কাঠামোর অংশরূপে স্বীকৃতি এনে দেয়। এমনকি খোদ লেবাননের সেনাবাহিনীও এখন রাজনৈতিক, সামরিক ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে হিজবুল্লাহর সহায়তা নিয়ে থাকে।
অভ্যন্তরীন ও বহিরাগত রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
তবে হিজবুল্লাহ এবং তাদের অস্ত্রের ভূমিকা নিয়ে লেবানেনের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজন বিদ্যমান। অপরদিকে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার বিনিময়ে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের চাপে রয়েছে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
২০০৬ সালের ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধে লেবাননের সেনাবাহিনী বাস্তবের চেয়ে প্রতীকী ভূমিকাই বেশি পালন করেছিল। সেই যুদ্ধে লেবাননের সেনাবাহিনীর ভূমিকা শুধু এতটুকুই ছিল যে, তারা কয়েকটি বেসামরিক এলাকা রক্ষা করেছিল এবং ত্রাণকার্যে অংশগ্রহণ করেছিল।
২০০৬ এর যুদ্ধে লেবাননের সেনাবাহিনীর অবস্থান হিজবুল্লাহকে যুদ্ধের প্রধান সামরিক শক্তিরূপে প্রকাশ করতে সহায়তা করেছিল।
ইসরায়েলের বর্তমানের আগ্রাসনে লেবানন সেনাবাহিনীর অবস্থান
বর্তমানে লেবাননের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে না জড়িয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। তারা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অনেক সামরিক সহায়তা পাওয়া সত্ত্বেও সরাসরি যুদ্ধে জড়াচ্ছে না তারা।
আর লেবাননের সেনাবাহিনী বর্তমান যুদ্ধে হিজবুল্লাহর সাথে মিলে সামরিক শক্তিতে পাশে থাকতে সক্ষম নয়।
বর্তমানে লেবানন সেনাবাহিনীর কাজ
বর্তমানে লেবানিজ সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী ফোর্স (ইউএনআইএফআইএল) এর সহযোগিতায় মিলে সীমান্ত নিরাপত্তা পাহাড়া দেয়।
লেবাননের সেনাবাহিনীর সামরিক সক্ষমতা
- সৈন্য সংখ্যা ৮০ হাজার
- বিভিন্ন প্রকারের ৭৮টি বিমান
- ট্যাঙ্ক ৩৬১টি
- সাঁজোয়া যান ৯,৮৬৪টি
- রকেট লঞ্চ প্যাড ৩০টি
- সামুদ্রিক যুদ্ধ জাহাজ ৮৬টি
- ফিল্ড আর্টিলারি ৩৭৪টি
- স্বচালিত আর্টিলারি ৮৪টি
ভবিষ্যতে সেনাবাহিনী যা করবে
লেবাননের সেনাবাহিনী দখলদার ইসরায়েলের সাধে কোনভাবেই যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয়। লেবানন প্রশাসন দখলদার ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে সেনাবাহিনীর পরিবর্তে হিজবুল্লাহকে প্রাধান্য দিবে।
সূত্র: আল আরাবি