২০০১ সালের ৭ই অক্টোবর আফগানিস্তানের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান দখলের সূচনা করে। যুদ্ধবিমান ও সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে দেশটির শহর ও গ্রামগুলোতে প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত। যা আফগান জনগণের জীবনে ভয়াবহ রক্তপাত, ধ্বংস ও অস্থিরতার কারণ হয়ে উঠে।
যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের আসল কারণ
আগ্রাসনের প্রথমে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী দাবি করেছিল, তারা আফগানিস্তানের ভূমি থেকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের হুমকি নির্মূল করতে চায়। কিন্তু এই আক্রমণের পেছনে লুকিয়ে ছিল তাদের উপনিবেশবাদী এজেন্ডা। মূলত আফগানিস্তানের সম্পদ দখল করা, জনগণের সংস্কৃতি পরিবর্তন করা ও জাতীয় পরিচয়কে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে এই আগ্রাসন চালানো হয়। দীর্ঘ বিশ বছর ধরে চলা এই আগ্রাসনে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিনাশ করা হয়। সেই সাথে ধ্বংসের সম্মুখীন হয় দেশটির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের ভিত্তি।
জনগণের ওপর আক্রমণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
নিষ্ঠুর এই দখলদারিত্ব চলাকালীন মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী নির্দয়ভাবে নারী শিশু বৃদ্ধসহ সাধারণ নিরস্ত্র মানুষদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। আকাশ থেকে ফেলা টনকে টন বোমায় ধ্বংস হয় বহু গ্রাম। বাস্তচ্যুত হয় অসংখ্য মানুষ। হাজার হাজার মুসলমানদের বন্দি করে বাগরাম, পুল-ই-চরকি ও গুয়ানতানামো কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের উপর চালানো হয় ভয়াবহ নির্যাতন আর অমানবিক অত্যাচার। যার ক্ষত আফগান জনগণের হৃদয়ে এখনো রয়ে গেছে অক্ষত।
সাহসী প্রতিরোধ ও সংগ্রামের ইতিহাস
আফগান জনগণ এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে রুখে দাঁড়ায়। ইসলামি আমিরাতের পতাকার নিচে স্বাধীনতার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করে দেয়। সেসময়ের সাহসী যোদ্ধারা নিজেদের ধর্ম, ভূমি ও সম্মান রক্ষায় নিজেদের জীবন বাজি রাখে। তাদের এই সংগ্রাম ছিল দেশপ্রেম ও সাহসিকতার এক অনন্য উদাহরণ। অবশেষে আল্লাহর ইচ্ছা ও আফগান জনগণের সংগ্রামের ফলেই আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী পরাজিত হয়। একই সাথে আবারও প্রমাণিত হয় আফগান এক অপরাজেয় জাতি।
বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের আশা
মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর পরাজয়ের পর আফগানিস্তানে ইসলামি আমিরাতের প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে দেশটি শান্তি ও নিরাপত্তার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা ও ন্যাটোর আক্রমণে যুদ্ধের যে আগুন জ্বলেছিল, তা এখন নিভে গেছে। দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো গঠন এবং জাতীয় একতার পথে এগিয়ে চলছে। আফগান জনগণ আবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফিরে আসার আশায় বুক বাঁধছে এবং ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
দেশটি এখন বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাট উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার প্রসার। আফগানিস্তান এখন এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে, যেখানে শান্তি ও অগ্রগতি জনগণের উন্নতির জন্য সঠিক পথে এগোচ্ছে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রভাব
এমন পরিস্থিতিতে কিছু বিদেশি শক্তি এবং সংগঠন আফগানিস্তানের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আফগানিস্তানকে অস্থিরতা ও অনাস্থার পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে যেতে চাইছে। এসব শক্তি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা করছে।
তবে আফগান জনগণ আজ অনেক বেশি সচেতন। তারা জানে, এই দেশটির ভবিষ্যৎ তাদের হাতে এবং তারা ঐক্যবদ্ধ থেকে উন্নয়ন ও শান্তির পথে এগিয়ে যাবে।
আফগানিস্তান এমন একটি দেশ, যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহিরাগত শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এসেছে। এই দেশের জনগণ এখন শান্তি ও উন্নয়নের দিকে পা বাড়াচ্ছে। আর আফগান জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা যেকোন ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে সক্ষম। আফগানিস্তানের এই কঠিন সময়েও তারা নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে সবার ওপরে রেখে কাজ করবে এবং ঐক্যবদ্ধ থেকে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।
সূত্র : হুররিয়াত রেডিও