তারিখ প্রদর্শন

যুদ্ধের প্রভাবে টালমাটাল ইসরায়েলের অর্থনীতি

যুদ্ধের প্রভাবে টালমাটাল ইসরায়েলের অর্থনীতি
যুদ্ধের প্রভাবে টালমাটাল ইসরায়েলের অর্থনীতি। ছবি ।সংগৃহীত

বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্থনৈতিক খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম কনভারসেশনের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, ‘আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে’র ধনী দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি মন্দার মুখে পড়েছে।

উল্লেখ্য, যুদ্ধ শুরুর পূর্বেও ইসরায়েলের অর্থনীতি প্রযুক্তির সাহায্যে দ্রুত উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রমতে সেসবে এখন বিরাট পরিবর্তন এসেছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের অর্থনীতির অবনতি অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। কারণ, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ থামার আপাতত কোন আভাস মিলছে না। অপরদিকে ইসরায়েল প্রতিনিয়ত যুদ্ধের নতুন নতুন ফ্রন্ট খুলে বসছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য লেবানন।

গাজায় এক বছর যুদ্ধে ইসরায়েলের ক্ষতি বিশেষ দিকগুলো নিম্নরূপ:

বছরব্যাপী গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে খরচ করতে হয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। ব্যাংক অব ইসরায়েল, ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা যায়, বিগত ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের মোট ব্যয় হয়েছে ৭৩ বিলিয়ন ডলার। দৈনিক হিসেবে প্রতিদিন ব্যয় হয়েছে ৪২৭ মিলিয়ন ডলার।

২০২৪ সালের জুনে এসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেট দাঁড়িয়েছে ২৬.৫৬ বিলিয়ন ডলারে। অথচ ইতোপূর্বে এই বাজেট ছিল ২৩.৫২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক ৭২.৭৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে। উল্লেখ্য, এই খরচ শুধুমাত্র গাজা যুদ্ধের। 

বছরব্যাপী যুদ্ধে ইসরায়েলের ব্যয় যেসব খাতে

  • সৈন্যদের বেতনে ব্যয় ১০.৪ বিলিয়ন ডলার
  • গোলাবারুদ ও অস্ত্রে ব্যয় ৮.২ বিলিয়ন ডলার
  • বিমান, জাহাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৫.৪ বিলিয়ন ডলার
  • লজিস্টিক পরিষেবায় ব্যয় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার
  • অস্ত্র বাবদ ব্যয় ৩.৭ বিলিয়ন ডলার
  • যোগাযোগ ও তথ্য ব্যবস্থাপনার পেছনে খরচ ২.৩ বিলিয়ন ডলার
  • অবকাঠামো তৈরি ও নাগরিক সহায়তায় খরচ ১.৭ বিলিয়ন ডলার
  • চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও সহায়তায় ১.১ বিলিয়ন ডলার

বিশাল অর্থনৈতিক মন্দা শেয়ার বাজারে ব্যাপক ক্ষতি

চলমান যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ইসরায়েলের মুদ্রা শেকেলের মূল্য ৫% হ্রাস পেয়েছে। যদিও ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেকেলের মূল্য ধরে রাখতে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে।

শেয়ার বাজার

এদিকে ইসরায়েলের শেয়ার বাজারে বিভিন্ন ব্যবধানে আনুমানিক ৯ থেকে ২০% ক্ষতি হয়েছে। অঙ্কের হিসেবে যার পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার।

ক্রেডিট রেটিং

ক্রমাগত অবনতিশীল অর্থনীতির কারণে রেটিং এজেন্সির কাছে ইসরায়েলের ক্রেডিট রেটিংও হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি ‘স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস’ ইসরায়েলের রেটিং কমিয়ে ‘এ+’ থেকে ‘এ’ তে নামিয়ে দিয়েছে।

অসহণীয় ঋণের বোঝা

এদিকে যুদ্ধ চলাকালীন অর্থনীতির চাপ সামলাতে নেওয়া ঋণ ২০২৩ অর্থবছরে সর্বমোট ৪৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ২০২৪ সালে এসে এই ঋণের বোঝা তা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

পর্যটন খাতে ধস

এদিকে যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের পর্যটন খাতে নেমেছে বিরাট ধস। গত বছর থেকে ইসরায়েলের এই খাতে সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ ৫.২৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যটন খাতে ক্ষতি ৫.০৪ বিলিয়ন ডলার। আর অভ্যন্তরীন পর্যটন খাতে ২০৪ মিলিয়ন ডলার।

যুদ্ধ শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ভ্রমণকারীর সংখ্যা মাত্র ৮ লক্ষ ৫৩ হাজার। যাদের সকলেই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফিলিপাইন থেকে।

এসব ভ্রমণকারীদের মধ্যে ৪৪% এসেছে তার বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সাক্ষাতে। ভ্রমণে এসেছে ২৮%। আর কাজের জন্য এসেছে ১৩%। ইসরায়েলের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বরাতে জেরুজালেম পোস্ট এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ এর শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল ভ্রমণকারীর সংখ্যা বড় জোর মিলিয়নে গিয়ে ঠেকবে। যা ২০২৩ সালে ভ্রমণকারীর মাত্র এক তৃতীয়াংশ। আর ২০১৯ সালের এক তো এক চতুর্থাংশেরও কম।

যুদ্ধ পলাতকদের ব্যয়বহুল পুনর্বাসন ব্যয়

চলমান যুদ্ধে এক লক্ষ ইসরায়েলির পুনর্বাসনে ইসরায়েল সরকারের ব্যয় হয়েছে ২.৩৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৪ মিলিয়ন রুমের জন্য ১৩.৫ মিলিয়ন। এবং হোটেল ব্যয় হয়েছে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী এসব পুনর্বাসন ব্যয় ৮৬৪ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছেছে।

মুদ্রাস্ফীতিতে বাজারের বেহালশা

২০২৪ এর আগস্টে ইসরায়েলে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয় ৩.৬ পার্সেন্ট। এছাড়া ২০২৪ এর জুলাইয়ের তুলনায় ইসরায়েলের পণ্যমূল্য আগস্ট মাসে বিভিন্ন মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

শাকসবজির মূল্য বেড়েছে ১৩.২%। পরিবহন খরচ বেড়েছে ২.৮%। আবাসন খরচ বেড়েছে ০.৬%। সংস্কৃতি খাতে মূল্য বেড়েছে ০.৫%।

আমাদের ফলো করুন