নিউজনেস্ট

ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন কি অব্যাহত রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকা?   

ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন কি অব্যাহত রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকা?   
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। ছবি: আমাদ

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের পক্ষে সবচেয়ে সরব ভূমিকা পালনকারী দেশটির নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি জনগণের উপর চলমান আগ্রাসনকে দক্ষিণ আফ্রিকা নিজ দেশের বর্ণবৈষম্যর সাথে তুলনা করে থাকে। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের ইতিহাস ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। তবে সদ্য গঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন জোট সরকারের অধীনে দেশটির এই নীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে কি না, তার উপর নিবদ্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।

ঐতিহাসিক সংহতি ও সহমর্মিতা

দক্ষিণ আফ্রিকার ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের শুরু হয়েছিল বর্ণবৈষম্যের সময় থেকেই। আফ্রিকার বর্ণবাদি শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বরাবরই ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করে এসেছে। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস ফিলিস্তিনকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করে।

আরও পড়ুন: মিনার থেকে মিম্বার: গাজার প্রতিরোধে মসজিদের ভূমিকা

১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যের অবসানের পরও তাই ফিলিস্তিন ইস্যুতে দেশটির সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। আফ্রিকান ন্যশনাল কংগ্রেস বা এএনসি নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন সরকারও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলি নীতির সমালোচনা করে আসছে। এএনসির চিন্তামতে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ইসরায়েলের নীতি দক্ষিণ আফ্রিকার অতীত হয়ে যাওয়া বর্ণ বৈষম্যমূলক নীতির মতই মানবতাবিরোধী।

আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পর, দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করে। আর এই মামলার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পানডোরের। বহু বছর ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ২০২৩ সালে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিকের মৃত্যু হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা এই পদক্ষেপ নেয়।

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জোট সরকারের সংকট

চলতি বছরে দক্ষিণ আফ্রিকা অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এএনসি প্রথমবারের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। নির্বাচনে তারা মোট ভোটের মাত্র ৪০ শতাংশ পায়। ফলে দলটি অন্যান্য দলের সাথে জোট করে সরকার গঠন করতে বাধ্য হয়। জোটের মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ) দলও রয়েছে। যারা আবার ইসরায়েল সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ফলে এখন এনসি নেতৃত্বাধীন সরকারের ফিলিস্তিন-সংক্রান্ত নীতিতে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই উদ্ভূত এই রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে এএনসি তার দীর্ঘকালীন ফিলিস্তিন নীতি বজায় রাখবে তা নিয়ে অনেকের মনেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পর্কে ভারসাম্য

অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনও এএনসির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এবং সরকারের মধ্যে অন্যান্য ফিলিস্তিন সমর্থক দলও রয়েছে। যেমন: কমিউনিটি পার্টি গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধে সামরিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ফলে এই মতাদর্শগত বৈচিত্র্য থেকে অনুমান করা যায় এএনসি তাদের ফিলিস্তিনকে সমর্থনে খুব বেশি বাধার সম্মুখীন হবে না। তবে জোট সরকারের কারণে তারা রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমিকা

আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলা কেবল একটি আইনগত পদক্ষেপ নয়, এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বৈদেশিক নীতির আসল মূল্যবোধের প্রতিফলন। বহুপক্ষে অবস্থান, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ন্যায়বিচারকে তারা সর্বদাই প্রাধান্য দিয়েছে। যদি আন্তর্জাতিক আদালত দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে রায় দেয়, তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে। এবং ইসরায়েলের প্রতি অন্যান্য দেশগুলোর অবস্থানকে প্রভাবিত করবে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত