আমেরিকার ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী সাত গুপ্তহত্যা

আমেরিকার ইতিহাসের সাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হত্যা
আমেরিকার ইতিহাসের সাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হত্যা। ছবি : আল জাজিরা

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত অতীত হয়েছে অনেক শক্তিশালী সাম্রাজ্য। এক সময়কার দাপুটে সেসব সাম্রাজ্যের নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে অনেক গুপ্তহত্যা। অতীতের এই ধারা থেকে বের হতে পারেনি বর্তমানের পরাশক্তিগুলোও। হালের পরাশক্তি বলা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু আমেরিকার অতীতেও রয়েছে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে খোদ প্রেসিডেন্টকে হত্যার নজির।

মার্টিন লুথার কিং

সাল ১৯৬৮। ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখটি ছিল ৪ঠা এপ্রিল। আমেরিকার মেফসিস শহরে বর্ণবাদ ও কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে বিরোধের জেরে এদিন জেমস আর্ল রে নামক এক ব্যক্তির হাতে নিহত হন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রখ্যাত মার্কিন পাদ্রী এবং মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং। লুথারের মৃত্যুতে ঐ সময়ে চলমান নাগরিক অধিকার আন্দোলন বড় ধরনের হোঁচট খায়। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা। পরবর্তীতে এই দাঙ্গা থামানো কেন্দ্র করেই পাস করা হয় ‘ফেয়ার হাউজিং’ আইন। এই আইনের ফলে আমেরিকার ধনীরা লাভ করে বিশেষ সুবিধা। বর্ণ বা রঙের উপর ভিত্তি করে তাদের সাথে ঘটা এতদিনের বৈষম্যের অবসান হয়।  

উইলিয়াম ম্যাকিনলে

যুক্তরাষ্ট্রের ২৫তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকিনলে। ১৮৯৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ১৯০১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ম্যাকিনলে তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই লিওন কোলগোশ নামের এক আততায়ীর হামলায় নিহত হন। লিওন কোলগোশ কর্তৃক ম্যাকেনলেকে হত্যার পেছনে অনুপ্রেরক হিসেবে কাজ করেছিল পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অব্যাহত নিপীড়ন।  

আর এই হত্যার পরপরই শুরু হয় থিওডোর রুজভেল্ট যুগের। যা ১৯০১ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের গৃহীত আধুনিক নীতিসমূহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শক্তি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য  প্রভাব ফেলে।

আব্রাহাম লিংকন

যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার বেশ কয়েক দিন পর ১৮৬৫ সালের ১৪ই এপ্রিল অভিনেতা জন উইল্কেস বুথ একটি নাট্য অনুষ্ঠানে আব্রাহামকে গুলি করে হত্যা করে। অভিনেতা উইল্কেস বুথ প্রেসিডেন্ট লিংকনকে হত্যা করে সেই সময়ে পরাজিত কনফেডারেট আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন। আমেরিকার ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট আব্রাহামের মৃত্যুর প্রভাব ছিল দীর্ঘ সুদূর প্রসারী।

জেমস গারফিল্ড

যুক্তরাষ্ট্রের ২০তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেমস গারফিল্ড। আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে গারফিল্ড ছিলেন খুবই অল্প সময় দায়িত্ব পালন করা একজন প্রেসিডেন্ট। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করে পরের জুলাই মাসের ২ তারিখেই গারফিল্ড চার্লস জে. গুইটো নামের এক ব্যক্তির গুলিতে নিহত হন। গারফিল্ডের হত্যাকারী গুইটোর ধারণা ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গারফিল্ডের প্রচারাভিযানে সমর্থন করার কারণে তিনি রাষ্ট্রিয় পদ পাবেন। কিন্তু এ ঘটনার ফলে নাগরিক সেবা সংস্কারের জন্য আমেরিকা বাধ্য হয়ে নতুন আইন প্রনয়ণ করে। যাতে বাধ্যতামূলক সরকারি চাকরি যোগ্যতার ভিত্তিতে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

জন এফ কেনেডি

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর টেক্সাস শহরের ডালাসে এক সাবেক সেনা সদস্যের গুলিতে তিনি নিহত হন। এ ঘটনা লক্ষ লক্ষ মার্কিনিদের একেবারে হতবাক করে দেয়। কারণ, তারা এ ঘটনা টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি দেখেছিল। এই ঘটনা এক বড় পরিবর্তনের সূচনা করে। এই গুপ্ত হত্যার পরেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে লিন্ডন জনসনের নির্বাচন হয়। এছাড়া ১৯৬৪ সালের বৈষম্যহীন নাগরিক অধিকার আইন এবং ১৯৬৫ সালের ভোটাধিকার আইনও এই ঘটনার জেরেই পাশ হয়।

ম্যালকম এক্স

আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ম্যালকম এক্স। যিনি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিনিদের অধিকার পক্ষে আওয়াজ তোলা একজন মুসলিম নেতা ছিলেন। ১৯৬৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক শহরে এক বক্তৃতা প্রদানকালে ম্যালকম এক্সকে হত্যা করা হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষমতায়ন ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তোলা এই মহান ব্যক্তির মুখ বন্ধ করতে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। কিন্তু আততায়ীর গুলিতে ম্যালকম এক্স প্রাণ হারালেও ম্যালকমের জীবনী ও বক্তৃতা আজও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিনিদের ইতিহাসে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে

রবার্ট কেনেডি

প্রয়াত রবার্ট কেনেডি একজন মার্কিন রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী ছিলেন। এছাড়াও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে কাজ করেছিলেন। 

১৯৬৮ সালের ৫ই জুন। ক্যালিফোর্নিয়ায় সবে প্রাথমিক নির্বাচন শেষ হয়েছে। সে সময়ে সারহান নামের এক ফিলিস্তিনি নাগনিক লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হোটেলে রবার্ট কেনেডিকে গুলি করে। সারহান ইসরায়েলের প্রতি কেনেডির অকুণ্ঠ সমর্থন ও উদার প্রতিশ্রুতির কারণে তার প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ ঘটনার ফলে আমেরিকায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

আমাদের ফলো করুন