নিউজনেস্ট

জমি দখল থেকে অর্থ আত্মসাৎ সবখানে ছিল গোলাপের উৎপাত

জমি দখল থেকে অর্থ লোপাট, সবখানেই গোলাপ ছিলেন ফিটফাট  
মাদারিপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ। ছবি : সংগৃহীত  

মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একজন দরিদ্র কৃষকের ছেলে হিসেবে জীবনের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে পিৎজা বিক্রি ও গাড়ি চালানোর কাজ করলেও, পরবর্তীতে বাংলাদেশে রাজনীতিতে প্রবেশ করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হন।

প্রাথমিক রাজনৈতিক যাত্রা

আবদুস সোবহান গোলাপের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে তিনি নিযুক্ত হন। পরে ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পদে উন্নীত করা হয়। ২০১৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হন।

বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যদিও ওই নির্বাচনে ‘রাতের ভোট’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ছিল। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

সম্পদ বৃদ্ধির কাহিনী

২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গোলাপ ও তার স্ত্রীর সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। ২০১৮ সালে নিজের নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা ছিল ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকায়। এ সময় তার স্ত্রীর ব্যাংকে জমানো সম্পদের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদের পাহাড়

গোলাপের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে  ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তি কিনেন। যেসব সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নিউইয়র্কে তিনি ৫টি কন্ডোমিনিয়াম কিনেছিলেন, যার মূল্য ছিল ২৪ লাখ ডলার। এছাড়াও তিনি আরও ৩টি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন। তবে এই সকল সম্পত্তির মালিকানা তার স্ত্রীর নামে রয়েছে বলে জানা গেছে।

মনোনয়ন ও পদবাণিজ্য

আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন ও পদবাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে তিনি বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতেন। মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের টাকাও তিনি ফেরত দিতেন না। এছাড়াও, দলীয় পদ দেওয়ার নামেও তিনি ব্যাপক অর্থ সংগ্রহ করতেন।

টিআর-কাবিখা অনিয়ম

২০২২-২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প(টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার(কাবিখা) প্রকল্পের সরকারি বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ অনিয়ম করে আত্মসাৎ করেছেন গোলাপ ও তার স্ত্রী গুলশান আরা । টিআর ও কাবিখার নামে বরাদ্দকৃত মালামাল এবং অর্থ অবৈধভাবে তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

জমি দখল ও অপকর্ম

গোলাপের বিরুদ্ধে জমি দখলেরও গুরুতর অভিযোগ আছে। তিনি নিজের বংশের লোকদের জমি থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের  জমিও দখল করেছেন বলে জানা গেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম নুরুল আলমসহ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আদালতে মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিকার পাননি।

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

আবদুস সোবহান গোলাপ বর্তমানে হত্যা মামলায় কারাবন্দী আছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।

দেশ-বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করে গোলাপ যেমন বিতর্কিত হয়েছেন, তেমনি এসব অভিযোগের যথাযথ তদন্ত ও বিচার দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ডেস্ক রিপোর্ট
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত