নিউজনেস্ট

গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল বানাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা   

গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল বানাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা
গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল বানাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ছবি : আল জাজিরা

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস একটি বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, দীর্ঘ দিন যাবত ইসরায়েলি সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের বিপদ থেকে এড়ানোর জন্য ফিলিস্তিনি বন্দিদেরকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অন্তত ১১ টি ইউনিট এ ধরনের অন্যায়-অপরাধ করেছে। শুধু ইসরায়েলি সেনা বাহিনীই নয়, অধিকাংশ সময়ে মানবতা বিরোধী এসব অপরাধে ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ফিলিস্তিনি বন্দিদের দিয়ে  বিস্ফোরকবাহী বুবি ফাঁদ পাতা, সুড়ঙ্গ খুঁজে খুঁজে ছবি সংগ্রহ করা ও সম্ভাব্য ফাঁদ প্রস্তুত বহন করাত।

মানবঢাল হয়ে ফিরে আসা এক ফিলিস্তিনির বক্তব্য

সম্প্রতি গাজার এক ফার্মাসিস্ট বশির দুলু নিউইয়র্ক টাইমসকে এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘ইসরায়েলি সৈন্যরা এসে আমাকে আমার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর তারা আমাকে অন্তর্বাস বাদে শরীরের সব পোশাক খুলে ফেলতে বলে। এরপর হিংস্রতার সাথে আমাকে হাতকড়া বেঁধে পাশের বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে সাত-আটজন সৈন্য মিলে একটি দেয়ালের ধ্বংসস্তুপের পেছনে গিয়ে লাউডস্পিকার দিয়ে নির্দেশনা দিতে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর তারা আমাকে একটি ইসরায়েলি ট্যাংকের সামনে যেতে বলে, যে ট্যাংক একটি মসজিদের দিকে যাচ্ছিল। এছাড়াও এভাবে আমার আরও কয়েকজন প্রতিবেশীকে রানতিসি হাসপাতালের নিকটে কয়েকটি সুড়ঙ্গপথ খোঁজার জন্য বর্বর ইসরায়েলি সৈন্যরা নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে সেই প্রতিবেশীদের আর দেখিনি। আমরা অনেক আশংকার মধ্যে থাকলেও সেদিন সন্ধ্যায় তারা যখন আমাকে কারাগারে নিয়ে যায়, কারাগারে আমার জন্য নিশ্চিত অপেক্ষমাণ যন্ত্রণার কথা জেনেও আমি তখন বেঁচে থাকব ভেবে অনেক আনন্দিত হয়েছিলাম!’

মানবঢাল নিয়ে ইসরায়েলি সৈন্যদের মন্তব্য

নিউয়র্ক টাইমস পরে এসব মানবতা বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল অথবা এর সাক্ষী ছিল ইসরায়েলের এমন সাতজন সৈন্য থেকে সাক্ষাৎকার নেয়। ইসরায়েলি সৈন্যরা এটাকে তাদের স্বাভাবিক রুটিন, পরিচিত ও সংগঠিত কাজ বলে আখ্যায়িত করে। শুধু তাই নয়, তারা এসব কাজ যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের লজিস্টিক সহায়তার জন্য এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারেই করেছে। তাদের লক্ষ্য ছিল, পদাতিক সৈন্যদের ঝুঁকি কমানো।

ইসরায়েলি সৈন্যরা আরও জানায়, একবার আমরা এসব কাজে বিরক্ত হয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানাই। তখন তারা আমাদেরকে বলে, ওসব সন্ত্রাসী ফিলিস্তিনিদের প্রাণের মূল্য আমাদের তুলনায় তুচ্ছ! অথচ আমাদের অফিসারেরা অধিকাংশ সময়েই  ফিলিস্তিনি বন্দিদের সাথে কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পর্ক খুঁজে পান না। পরে তাদেরকে কোন প্রকার অভিযোগ না করেই মুক্তি দিয়ে দেন।

ইসরায়েলিদের কাছে ফিলিস্তিনিদের মূল্য

ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনি বন্দিদেরকে ‘বলির পাঁঠা’ হিসেবে গণ্য করে থাকে! শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসী ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে বিভিন্ন তুচ্ছ পরিভাষা ব্যবহার করে! যেমন, যে সমস্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের গ্রেফতার করে বিভিন্ন দলে গোয়েন্দা মিশনে ব্যবহার করে, তাদেরকে তারা ‘বুয়ুদ’ বা মশা বলে আখ্যা দেয়! আর যাদেরকে গাজায় নিয়ে ছোট ও নির্দিষ্ট কোন কাজে লাগায়, তাদেরকে ‘দাবাবির’ বা ভিমরুল বলে থাকে!

মানবঢাল হয়ে ফিরে আসা শাব্বিরের লোমহর্ষক ঘটনা

মুহাম্মাদ শাব্বির নামের গাজার এক যুবক নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, ‘একবার ইসরায়েলি সৈন্যরা আমাকে পুলিশি কুকুরের মত খান ইউনিসের বুবি ফাঁদ পাতা এক ফ্লাটে পাঠায়। সেখানে যাওয়া ছিল আমার কঠিন এক অভিজ্ঞতা! আমি তো ভেবেছিলাম, সেটাই আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত! কারণ, সেখানে দেয়ালের দীর্ঘ একটা জায়গাজুড়ে বোমা সংযুক্ত তার ঝুলে ছিল! কিন্তু কি অজানা কারণে সে ডিভাইসগুলো আর ব্লাস্ট হয়নি!’

তিনি আরও জানান, ‘আমাকে মুক্তি দেওয়ার কয়েকদিন আগে ইসরায়েলি সৈন্যরা এক অপারেশনের সময় আমাকে তাদের সামরিক ইউনিফর্ম পরিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করে৷ যাতে হামাসের সৈন্যরা আমার উপর গুলি চালায় আর যাতে এর মাধ্যমে তারা হামাসের অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে! আমি প্রথমে পালানোর কথা ভাবলেও পরে পিছিয়ে আসি। কারণ, তারা আমাকে ড্রোন দিয়ে নজরদারি করছিল! পালাতে গেলেই গুলি করে বসত!’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত