গাজায় সময়ে সময়ে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর অপারেশনের ভিত্তিতে বহু ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে আসে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম। সেইসব অস্ত্রের মধ্যে গ্লক-১৯ নামে একটি রিভলবার ছিল। সময়ের পরিক্রমায় এই রিভলবারটি হয়ে ওঠে এমন এক ঐতিহাসিক প্রতীক, যার পেছনের গল্প অনেক দীর্ঘ এবং স্মৃতিময়।
ঐতিহাসিক পিস্তলের উত্থান
সাল ২০১৮। ইসরায়েলের স্পেশাল ফোর্সের একটি দল দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় এক গোপন অভিযানে নামে। গোপন সেই মিশনটি ছিল, খাবার গাড়িতে চড়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের ওপর নজরদারি করা এবং তথ্য সংগ্রহ করা। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর ভাগ্য সহায় হয়নি। ইসরায়েলি বাহিনীর এই অপারেশন কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার নূর বারাকার চোখে ধরা পড়ে যায়। নূর বারাকা দ্রুততার সঙ্গে ইসরায়েলের সেই স্পেশাল ফোর্সকে আটক করেন এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
কিন্তু হঠাৎ ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হস্তক্ষেপে এই জিজ্ঞাসাবাদ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এবং সেই মূহুর্তে আটককৃত ইসরায়েলি সেনারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু পালানোর সময় ইসরায়েলিরা তাদের বেশকিছু সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র ফেলে রেখে যায়। আর সেই অস্ত্রগুলোর মধ্যেই পাওয়া যায় ঐতিহাসিক গ্লক-১৯ রিভলবারটি। পরবর্তীতে শুধুমাত্র সেই রিভলবারের কারণে গাজার সেই সংঘর্ষ ‘হাদ আস সাইফ’ বা ধারালো তরবারি নামে পরিচিতি লাভ করে।
রিভলবারটি কেন ঐতিহাসিক?
ঐতিহাসিক সেই রিভলবারটি ছিল ইসরায়েলি বাহিনীর বিশেষ সদস্য, মাহমুদ খায়ের উদ্দিনের। মাহমুদ ছিলেন দ্রুজ সম্প্রদায়ের একজন অফিসার এবং ইসরায়েলের ‘আমান’ অপারেশন ইউনিটের জেনারেল। তবে গাজার খান ইউনিসে সেদিনকার সংঘাতে ইসরায়েলি জেনারেল মাহমুদ নিহত হন। আর মাহমুদের মৃত্যুর পর, রিভলবারটি গাজা যুদ্ধের অনন্য স্মারক স্বরূপ সদ্য প্রয়াত হামাস প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে প্রদান করা হয়। ফলে তখন থেকে সিনওয়ারের সার্বক্ষনিক সঙ্গী হয়ে নতুন এক ঐতিহাসিক পরিচয় লাভ করে রিভলবারটি।
সিনওয়ারের হাতের প্রতীক
সিনওয়ার গ্লক-১৯ রিভলবারটিকে শুধু একটি অস্ত্র হিসেবে নয়, বরং এটিকে ইসরায়েলের পরাজয়ের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেন। যা সর্বদা প্রকাশ করে করে প্রতিরোধ, সংগ্রাম ও ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে অবিচল প্রতিজ্ঞা।
ইসরায়েলি সূত্র অনুযায়ী, ইহাইয়া সিনওয়ারের দেহের সাথে পাওয়া সেই গ্লক-১৯ রিভলবারটি এখন একটি ঐতিহাসিক স্মারক। এটি এখন শুধু অস্ত্র নয়, বরং এটি দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এক নীরব সাক্ষী। এ পিস্তলটি যেমন ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য এক অপমানের প্রতীক, তেমনি ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জন্য গৌরব ও সম্মানের প্রতীক। ঠিক যেমনটি ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, এই রিভলবারটি হামাসের কাছে থাকা ইসরায়েলি ক্ষতির একটি রাজ সাক্ষী।
সূত্র: আনাল আরাবি