নিউজনেস্ট

ওয়াসার দুর্নীতির মধ্যমণি ছিলেন তাকসিম এ খান

ওয়াসার দুর্নীতির মধ্যমণি ছিলেন তাকসিম এ খান
ওয়াসার দুর্নীতির মধ্যমণি ছিলেন তাকসিম এ খান। ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসার তিনটি বড় প্রকল্প—দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার, সাভারের ভাকুর্তা প্রকল্প এবং পদ্মা থেকে ঢাকায় পানি সরবরাহ প্রকল্প—নিয়ে অভিযোগ উঠেছে ব্যাপক দুর্নীতির। ৮ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এসব প্রকল্পে ওয়াসার তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে।

মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি ও ব্যর্থতা

দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প, যার ব্যয় ইতিমধ্যে ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে প্রকল্পটি ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো অপূর্ণই রয়ে গেছে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হলেও পুরো পাইপলাইন সংযোগের অভাবে কার্যকরী হয়নি। এদিকে, প্রতি বছর ওয়াসার ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিচালিত এসব প্রকল্প থেকে আসছে না কোনো রাজস্ব।

অন্যদিকে সাভারের ভাকুর্তা প্রকল্প, মিরপুর এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য নেওয়া ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্পেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। এই প্রকল্পে ৪৬টি গভীর নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও এখন পর্যন্ত  কাজ হয়েছে মাত্র কয়েকটির। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ না করায় ব্যয় বেড়েছে এবং ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হলেও প্রকল্প এখনো অসম্পূর্ণ।

অপরদিকে পদ্মা থেকে যশলদিয়ার পানি ঢাকায় সরবরাহ প্রকল্প নিয়ে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমানের পাইপ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের লাইনগুলো পরীক্ষামূলক চালু করার সময় পাইপ ফেটে যায় এবং প্রকল্পটি কার্যত ব্যর্থ হয়।

তাকসিম এ খানের ক্ষমতা ও প্রভাব

এদিকে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান, যিনি ৭ বার চুক্তিভিত্তিক এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তার সময়ে এসব প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, ‘ঢাকা ওয়াসা কর্তৃত্ববাদী প্রশাসনের উদাহরণ। এ প্রতিষ্ঠানে এক ব্যক্তির ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।’

ওয়াসার সাবেক প্রকৌশলী রবিউল কাইজারও তাকসিমের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে জানান, তিনি তাকসিমের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি আদালতে ন্যায়বিচার খুঁজছেন।

মন্ত্রণালয়ের নিষ্ক্রিয়তা

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ওয়াসার প্রকল্পগুলোর দুর্নীতি নিয়ে ২০১৯ সালে একটি প্রতিবেদন জমা দিলেও মন্ত্রণালয় কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। তাছাড়া, ওয়াসার বোর্ডকে দুর্বল করে রাখা এবং মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণহীনতা তাকসিমের অবাধ ক্ষমতার পেছনে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তাকসিম এ খানের মতো ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রকল্পগুলোতে সঠিক তদারকির মাধ্যমে লুটপাট বন্ধ করা জরুরি।

ডেস্ক রিপোর্ট
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত