চলমান ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিকে এক সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বিশেষ করে অঞ্চলটি জুড়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও তেল সরবরাহে এ পর্যন্ত যে ক্ষতি হয়েছে, তা এখন শুধু অর্থনৈতিক প্রভাবেই সীমাবদ্ধ নেই বরং জন্ম দিয়েছে বড় ধরনের সামরিক ও রাজনৈতিক উদ্বেগের।
বৈশ্বিক বাণিজ্যে সুয়েজ খালের ক্ষয়ক্ষতি
ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনার ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে সুয়েজ খাল। গত ১২ মাসে লোহিত সাগরের নিকটবর্তী কৌশলগত এই অঞ্চলটির আয় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। যা খালটির মোট আয়ের প্রায় ৫০ থেকে ৬০%। মিশরের প্রেসিডেন্টের মতে, মাস হিসেবে এই ক্ষতি আনুমানিক ৫০০ থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার। যা স্পষ্টতই মিশরসহ আন্তর্জাতিক সরবরাহ লাইনের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা।
নতুন পথের সন্ধানে: বিকল্প রুটের আলোচনা
এদিকে ইসরায়েলের স্বার্থ সম্পর্কিত জাহাজগুলোর ওপর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ক্রমাগত আক্রমণে সুয়েজ খাল ও ‘বাব আল মানদ’ এর প্রণালীর বিকল্প খুঁজছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে রাশিয়া সংযুক্ত সমুদ্রপথটি ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সংক্ষিপ্ত যোগাযোগের জন্য একটি সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে প্রস্তাবিত হয়েছে।
পাশাপাশি সাম্প্রতিক জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারত-ইউরোপ সংযোগের একটি নতুন সমুদ্র রুট তৈরি কথাও আলোচনায় এসেছে। যেই সমুদ্র রুট ইসরায়েল, জর্ডান, সৌদি আরব, ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্য দিয়ে গিয়ে ভারতকে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। তবে সুয়েজ খালের বিকল্প হিসেবে প্রস্তাবিত সকল পথ এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। তবে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে অচিরেই তা বাস্তবায়নের প্রয়াস পেতে পারে।
ইরান ও ইসরায়েল সংঘাতের বড় ঝুঁকি
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার সবচেয়ে বড় ঝুকি হচ্ছে, ইসরায়েল যদি ইরানের তেল স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানে, তবে তেল সরবরাহ ঘাটতি পূরণের জন্য আরবের তেল সরবরাহ সংস্থা ‘ওপেক’ এবং সৌদি আরবের উপর বাড়তি চাঁপ ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে যদিও যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত তেল মজুদ থেকে সরবরাহ বাড়াবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে ইসরায়েল ইরানের হরমুজ প্রণালীতে তেল পরিবহন ব্যাহত করে দিলে, তেলের বৈশ্বিক সরবরাহে তা বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। এর পাশাপাশি ইরান যদি উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানে, তবে সেই সংঘাত বিশ্বব্যাপী একাধিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেবে।
অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ইসরায়েল
তাছাড়া একই সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে ইসরায়েলের অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন সত্ত্বেও, গাজার প্রতিরোধ আন্দোলন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি এবং ইরাকের বিভিন্ন গোষ্ঠীর অব্যাহত আক্রমণে ইসরায়েলের অর্থনৈতিতে তৈরি হয়েছে মন্দার ঝুঁকি। ফলে শীর্ষ অর্থনীতি ও বাণিজ্যে রেটিং প্রদানকারী সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ও মুডিজ কর্পোরেশন ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি ক্রেডিট রেটিং পর্যায়ক্রমে ‘এ’ থেকে ‘এ মাইনাস’ এবং ‘এ-২’ থেকে ‘বিএএ-১’এ নামিয়ে দিয়েছে। যা ইসরায়েলি অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের বিপদ সংকেত।
সংঘাতের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
মোটকথা, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি যে শুধু মধ্যপ্রাচ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্য ও জ্বালানি বাজারেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এবং সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতির অবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলবে।
সূত্র: আমাদ নিউজ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link