সম্প্রতি ইউক্রেন ও দক্ষিণ কোরিয়া অভিযোগ করেছে, উত্তর কোরিয়া হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়ে রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তা করছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গোয়েন্দা তথ্যেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। যদিও রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করছে। এবং যুক্তরাষ্ট্র এখনো এর সত্যতা যাচাই করছে। তবে ঘটনাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রতিবেদনগুলোর বক্তব্য নিম্নরূপ:
- ইউক্রেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার পক্ষে সহায়তা করার জন্য সেনা মোতায়েন করছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া জানাচ্ছে, মুখ চেনার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি দিয়ে ইউক্রেনের এক যুদ্ধফ্রন্টে সম্মুখভাগে থাকা কয়েক ডজন উত্তর কোরিয়ান কর্মকর্তাকে সনাক্ত করা হয়েছে, যারা উত্তর কোরিয়ার সরবরাহকৃত কেএন-২৩ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল।
- দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা, চলতি অক্টোবরের ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর উত্তর কোরিয়ার বিশেষ বাহিনীকে ভ্লাদিভোস্টকে স্থানান্তরিত করেছে। এবং শীঘ্রই এমন তৎপরতা পুনরায় শুরু হতে পারে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাটির তরফে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
- দক্ষিণ কোরিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু গবেষকদের মতে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ইতিমধ্যেই উত্তর কোরিয়ার তৈরি কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং উত্তর কোরিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে আর্টিলারি গোলা ও ট্যাংকবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করেছে।
রাশিয়াকে কেন সহায়তা করছে উত্তর কোরিয়া?
এর পিছনে কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখযোগ্য
- গত জুলাইয়ে পুতিন এবং কিম জং উনের মধ্যে এক বৃহত্তর সামরিক সহযোগিতা চুক্তির আওতায় পারস্পরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বাইরের আগ্রাসন মোকাবিলায় করা এই চুক্তি সামনে উভয় দেশ আরও শক্তিশালী করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
- উত্তর কোরিয়া যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায় এবং অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে আগ্রহী। এর আগে ২০২৩ সালে রাশিয়াকে অস্ত্র বিক্রি করে প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল উত্তর কোরিয়া।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য প্রভাব
আমেরিকা ও ন্যাটো রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার সেনা পাঠানোর বিষয়টিতে সম্মত না হলেও ইতিমধ্যেই কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
- সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনায় আপত্তি এবং নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে রাশিয়ার কাছে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ।
- এছাড়া আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এই ঘটনার ওপর নজর রাখছে এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার সেনা উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনা যুক্ত হলে যুদ্ধের মেয়াদ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। যদিও এই পদক্ষেপ যুদ্ধে সরাসরি কোনো বড় প্রভাব ফেলবে না, তবুও এই সহায়তার মাধ্যমে যুদ্ধের শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তিত হতে পারে। এবং এই ঘটনা বাস্তব হলে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া নিজেদের মাঝে পারস্পরিক যে সহায়তা করছে বলে যে দাবি উঠছে, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক অবস্থানগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: আমাদ নিউজ