হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে নির্বাসিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের নিয়মিত আয়োজন ভার্চুয়াল টকশোতে বাংলাদেশের অন্দরে মিডিয়া এবং সাংবাদিক গুপ্তচরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব এবং গুম-গ্রেফতারে তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন অতিথিরা।
২৫ অক্টোবর ২০২৪ (শুক্রবার) রাত নয়টায় ইলিয়াস হুসাইনের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক এবং ইউটিউবে লাইভ টকশোটি শুরু হয়। এতে ভুক্তভোগী আলেম, সেনাকর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং নাগরিক সমাজ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ তিনঘণ্টা চলমান এই টকশোতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আলোচনা করেন স্বৈরাচার আমলে তিন মেয়াদে প্রায় ৬ বছর কারা নির্যাতিত আলেম, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার, পতিত রেজিমে দীর্ঘ ১১ বছর কারাবন্দী আলেম মুফতি জসিমুদ্দিন রহমানি, বিদেশি গুপ্তচরদের ইন্ধনে গুম হওয়া আলেম মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আড়াইহাজারী, আওয়ামী আমলে গুমের শিকার, আয়নাঘর ফেরত সেনাকর্মকর্তা কর্নেল হাসিনুর রহমান, কারাবন্দী আলেম মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানি সহ বেশ কয়েকজন। টকশোতে অতিথি হিশেবে আরও ছিলেন সাংবাদিক ড. কনক সরওয়ার এবং জুলাই বিপ্লবের অন্যতম এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যসহ আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী।
আলোচনায় মূল টপিক ছিল সাংবাদিক নামধারী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাংলাদেশী গুপ্তচরদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করুন। এই টপিকে আলোচনা করতে গিয়ে মুফতি হারুন ইজহার কারাগারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
তিনি জানান, “গ্রেফতারের পরে প্রথমে আমাদেরকে গুম রাখা হতো। পরে রিমান্ডের নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানুষিক এবং নারকীয় নির্যাতন করা হতো। সিটিটিসি ভবনে রিমান্ডে অবস্থায় সময় অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি এসে মানবাধিকার সংস্থার ভুয়া পরিচয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। পরে আমি কারাগার থেকে বের হয়ে দেখি সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের একজন হলেন কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সুস্পষ্ট এজেন্ট। আমি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তিনি মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং নির্যাতন করেছেন। সেই সন্তোষ শর্মা বিপ্লবের পর বিপ্লবের পুলিশের নতুন আইজিপির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে? কীভাবে বিপ্লব-উত্তর বাংলাদেশে উপদেষ্টা সহ বিভিন্ন মহলে নন্দিত হচ্ছে এই প্রশ্ন আমার।”
পরে কালবেলার সাংবাদিকের সাথে মুফতি হারুন ইজহারের এক ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে তার এই বক্তব্যের প্রামাণিক দলিল পেশ করা হয় অনুষ্ঠানে। এরপর একে একে মুফতি জসিমুদ্দিন রহমানি, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ, কর্নেল হাসিনুর রহমানসহ অতিথিরা সন্তোষ শর্মাসহ মিডিয়ায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাংলাদেশী গুপ্তচরদের অবাধ প্রবেশের মাধ্যমে কারাগারে নির্যাতন এবং বিদেশে তথ্য সরবারাহের অভিযোগ আনেন। এতে সিটিটিসির অফিসার ইমরান সহ বেশকিছু ব্যক্তির নাম সামনে আসে।
মুফতি জসিমুদ্দিন রহমানি জানান, “আমাকে মিডিয়ায় বারবার বলা হয়েছে জঙ্গি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা, জেএমবির শীর্ষ নেতা ইত্যাদি। অথচ আমি গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত এমন কোনো সংগঠনের নামই জানতাম না এবং আদালতে আমি এই জবানবন্দি দিয়েছি। জজ সাহেব রায় লেখার সময় স্পষ্ট লিখেছেন এসবের সাথে আমার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তারপরও কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বিভিন্ন পত্রিকা এবং সাংবাদিকেরা আমার নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে, আমাকে জঙ্গি নেতা হিশেবে আখ্যায়িত করেছে।”
উল্লেখ্য, মুফতি জসিমুদ্দিন রহমানি কারামুক্ত হওয়ার পর ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন, সময় সংবাদ সহ বেশকিছু গণমাধ্যম তাকে হিযবুত তাহরির, নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতা বলে রিপোর্ট করেছিল।
সাংবাদিক ইলিয়াস প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনেন। ড. কনক সরওয়ার বলেন, যারা মিডিয়ায় থেকে বিপ্লবী চেতনা ধারণ না করে গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট রেজিম এবং পাশের রাষ্ট্রের গোলামী করেছে, তাদের ন্যারেটিভ প্রচার করেছে রেজিমকে শক্তিশালী করেছে। রাষ্ট্রের কল্যাণের দিকে না তাকিয়ে বন্ধু দেশের স্বার্থোদ্বারে কাজ করেছে, বাংলাদেশের বিদগ্ধ স্কলার এবং আলেমদের নাটক সাজিয়ে জঙ্গি বানিয়ে উপস্থাপন করেছে, তাদেরকে প্রথমে সকল মিডিয়া থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পিনাকী ভট্টাচার্য্য বলেন, “আমরা আজ টকশোতে বেশকিছু পুলিশ অফিসার এবং সাংবাদিকদের নাম জানলাম ভুক্তভোগীদের জবানে। এখন আমাদের প্রথম দাবি হওয়া উচিত আগামী ২৪ ঘন্টার ভিতর তাদেরকে গ্রেফতার করা এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত তাদের নিয়োগকর্তা কারা।”
অতিথিরা আরও আলোচনা করেন, কীভাবে মিডিয়ায় জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়, কীভাবে একজন আলেমকে জঙ্গি নাটকে ফাঁসানো হয়, কীভাবে ভারতীয় ন্যারেটিভ সুকৌশলে দেশবাসীকে খাওয়ানো হয়, কতিপয় মিডিয়া কর্মীরা কীভাবে নিরীহ মানুষদের তথ্য সরবরাহ করে র এজেন্টদের হাতে। ২৫ অক্টোবর শুক্রবার মুফতি জসিমুদ্দিন রহমানি কর্তৃক ঘোষিত কালবেলা এবং ডেইলি স্টার অফিস ঘেরাও কর্মসূচিকে কীভাবে ভুল ব্যাখা করে উপদেষ্টাদের মাধ্যমে বিবৃতি আদায় করা হয় তাও খোলাসা করেন মুফতি জসিমুদ্দিন রহমানি এবং ইলিয়াস হুসাইন। পরে আগামী শুক্রবার নতুন করে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং কালবেলা অফিস ঘেরাও কর্মসূচি হবে বলে ঘোষণা করেন সাংবাদিক ইলিয়াস হুসাইন।