তবে কি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসী ছিলেন? সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এক মন্তব্যের জেরে এমনই প্রশ্ন উড়ে বেড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী হাওয়ায়।
ঘটনার শুরু রিপাবলিকানদের মনোনীত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির পক্ষে ইলন মাস্কের শক্ত অবস্থান নেওয়ার পর থেকে। কিন্তু বোমাটা ফাটালেন জো বাইডেনই। বাইডেনের মন্তব্য বলে কথা!
সম্প্রতি এক বক্তব্যে ইলন মাস্ককে উদ্দেশ্য করে বাইডেন বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এক সময় এখানে (আমেরিকায়) অবৈধভাবে কাজ করতেন। আমি মজা করছি না। ইলন মাস্ক স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি। বরং সরাসরি কাজ শুরু করেন, যা আমাদের আইনের লঙ্ঘন। অথচ আজ সেই মাস্কই অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন।’ আর বাইডেনের এই বক্তব্যের পিছনে ছিল ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
মাস্কের শুরুর জীবন
ওয়াশিংটন পোস্টের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইলন মাস্কের শুরুর কর্মজীবনকে একটি অজানা অধ্যায় বলা যায় । ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই উদ্যোক্তা স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। কিন্তু ইলন মাস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে নিজের সফটওয়্যার কোম্পানি জিপ-টু গড়ে তোলেন। যা আবার ১৯৯৯ সালে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। এটাই ছিল তার ধনকুবের হবার প্রথম ধাপ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাস্ক প্রথমে ‘এফ-ওয়ান’ ক্যাটাগরির ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, যা মূলত শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ একটি ভিসা ছিল। কিন্তু তিনি পড়াশোনা না করে কাজ শুরু করেন, যা আইনগতভাবে সঠিক ছিল না। পরবর্তীতে তিনি ‘এইচ ওয়ান-বি’ কর্ম ভিসায় চলে আসেন। যা বিদেশি কর্মীদের জন্য নির্ধারিত।
মাস্কের আত্মপক্ষ সমর্থন
তবে ইলন মাস্ক তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি সবসময়ই বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছেন এবং প্রথমে শিক্ষার্থী হিসেবে এবং পরে কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, তার প্রথম কোম্পানির অর্থলগ্নি চুক্তির সময় তাকে ৪৫ দিনের মধ্যে আইনগতভাবে নিজ অবস্থান ঠিক করতে বলা হয়েছিল। এমনকি বিনিয়োগকারীরা এর অন্যথা হলে নিজেদের বিনিয়োগ ফেরত নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে মাস্কের অবস্থান
মাস্কের সম্পর্কে আলোচিত এই ‘অবৈধ কর্মজীবন’ নিয়ে আলোচনা এমন সময় উঠল, যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান দাতা এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের সক্রিয় কর্মী হিসেবে ট্রাম্পের সীমান্ত বন্ধ এবং অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপক বহিষ্কারের নীতিকে জোরালো সমর্থন করছেন।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পর মাস্ক ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারে ৭৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি তহবিল দান করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
এদিকে ইলন মাস্কের আমেরিকায় শুরুর জীবন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মভিসা বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম কোহেন বলেন, ‘মাস্কের প্রতিরক্ষায় একটি বড় ফাঁক আছে। কারণ, বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ না করে কাজ করতে পারেন না। এমনকি পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও তাদের কাজ করার অনুমতি থাকে না।’ এই কারণেই মাস্কের শুরুর দিনগুলো নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
মাস্কের জীবনের রহস্যময় অধ্যায়
যদিও ইলন মাস্ক তার জীবনীতে কখনোই অবৈধভাবে কাজ করার কথা স্বীকার করেননি। তবে তার শুরুর কর্মজীবন নিয়ে বিতর্ক ক্রমশই বাড়ছে। বিশ্বের শীর্ষ ধনী হওয়ার যাত্রা কতটা বৈধ ছিল, তা নিয়ে আলোচনা হলেও এতে তার বর্তমান অবস্থানে কোন প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয় না। সুতরাং এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, মাস্কের এই বিতর্কিত অবস্থান বিশ্বের শীর্ষ ধনী হওয়ার যাত্রায় যতটা চমকপ্রদ, ততটাই রহস্যময়।
সূত্র: আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link