নিউজনেস্ট

চট্টগ্রামে প্রথম আলো ডেইলি স্টার নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন

চট্টগ্রামে প্রথম আলো ডেইলি স্টার নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন
গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রখম আলো ও ডেইলি স্টার নিষিদ্ধের দাবীতে মানববন্ধন করা হয়। ছবি: নাহিন শিকদার

জঙ্গি নাটক সাজিয়ে অসংখ্য দেশপ্রেমিক আলেম ও নাগরিকদের গুম-খুন  এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ ধামাচাপা দেয়ার কারণে দেশের প্রসিদ্ধ দুই পত্রিকা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদ।

২ নভেম্বর শনিবার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে চট্টগ্রাম আলেমসমাজ, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং আপামর জনসাধারণের ব্যপক সমাগম হয়।

এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম জেলা উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা কামরুল ইসলাম, সহ সভাপতি মাওলানা জিহাদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ফতেহপুরী, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ছাত্র সাকিব আল মামুন, ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির ছাত্র আইমান কাসির, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র শোয়াইব আব্দুল্লাহ এবং চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র মিনহাজ উদ্দিন।

মূলত প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ইলিয়াস হুসাইনের ‘পতিত রেজিমে বিনা অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাবাসের হিসাব চান ভুক্তভোগী আলেমগণ: সাংবাদিক নামধারী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাংলাদেশী গুপ্তচরদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করুন’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত লাইভ অনুষ্ঠান এবং প্রথম আলোকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসহ জনপ্রিয় এ্যাক্টিভিস্ট  পিনাকী ভট্টাচার্যের ডেইলি স্টারকে নিয়ে করা ইউটিউব ভিডিও অনলাইনে ব্যাপক সাড়া ফেলার পর থেকেই দেশব্যাপী প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার পত্রিকা দুটি নিষিদ্ধের আওয়াজ উঠতে শুরু করে।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক ইলিয়াস ও পিনাকি ভট্টাচার্যের প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার আগে থেকেই প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ করে আসছিল দেশপ্রেমিক আলেমসমাজ সহ সচেতন নাগরিক মহল।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারকে ভারতীয় পেইড এজেন্ট সাব্যস্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পত্রিকা দুটোকে বয়কটের ডাকও দেন অনেক নেটিজেন।

কিন্তু সাংবাদিক ইলিয়াস আর পিনাকি ভট্টাচার্যের অনুসন্ধানী ভিডিওগুলো জন্ম দেয় ব্যাপক আলোচনার। চট্টগ্রামে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার নিষিদ্ধের দাবিতে আজকের মানববন্ধনকে সেই আলোচনার বড়সড় প্রতিক্রিয়া বলা যায়। এদিকে চট্টগ্রামে হওয়া ওই মানববন্ধনের আয়োজক সংগঠন চট্টগ্রাম উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে মানববন্ধনের ব্যাপারে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ, আপনারা অবগত আছেন আজকের এই মানববন্ধন ফ্যাসিস্ট হাসিনার মুখপাত্র প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের নিবন্ধন বাতিলের জন্য। আমরা আমাদের দাবির কারণসমূহ এবং আমাদের বক্তব্য নিম্নে উল্লেখ করছি।

মূলত প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই হাসিনা সরকার এবং ভারতের পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। বিশেষ করে ১/১১ ঘটিয়ে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার। মূলত হাসিনার বিগত ফ্যাসিস্ট রেমিজকে এই প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টাররাই টিকিয়ে রেখেছিল। বিরোধীদলকে নিয়ে সবসময়ই বানোয়াট তথ্য দিয়ে মিথ্যা খবর প্রচার করেছে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার।

হাসিনার আমলে স্বাধীন বাংলাদেশে  বিডিআর বিদ্রোহের নাম দিয়ে পিলখানায় ৫৭ জন দেশপ্রেমিক আর্মি অফিসারকে হত্যার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের সাথে জড়িত প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার। শাপলা চত্বরের গনহত্যা, জামাত-বিএনপি নেতাদের গণহারে ফাসি দেয়াতে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের ভূমিকা ছিল ষোলো আনা। আওয়ামী মুজিববাদী ন্যারেটিভ এবং বাঙালিয়ানা বয়ান নিরীহ জাতির উপর চাপিয়ে দিয়ে ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল মতি-আনাম গং।

পতিত আওয়ামী রেজিমের সকল গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, অর্থপাচার সহ সকল প্রকারের দুর্নীতিকে বৈধতা দিতে নিত্যনৈমিত্তিক নতুন বয়ান হাজির রাখত প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার। দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা খেয়ে ভারতের ইন্ধনে দূর্নীতির সেঞ্চুরি করত আওয়ামী লীগ। কিন্তু ইসলামপন্থী এবং বিরোধী দলের উপর দমননীতি সাজাতো প্রথম আলো-ডেইলি স্টার। আলেমসমাজ, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, সাংবাদিক সহ যারাই ভারতীয় আগ্রাসন ও আওয়ামী লুটতরাজ রেজিমের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠতার সাথে কথা বলার সাহস করত, তাদেরকে জঙ্গি জুজুর ফাঁদে ফেলে ধ্বংস করে দিতো মতি-আনামরা।

দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি জঙ্গির খবর পড়েছে এই পত্রিকাগুলোতে। কথিত জঙ্গিরা মাঠে কার্যক্রম শুরু করার আগেই এই পত্রিকাগুলোতে প্রতিবেদন তৈরি করা থাকতো এবং সেই প্রতিবেদন রেজিম কর্তৃক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হতো। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠিক সেভাবেই কাজ করতো যেভাবে এই পত্রিকাগুলো চাইতো। আর এই পত্রিকাগুলো সেটাই চাইতো, যেটা পাশের দেশ ভারত চাইতো। আমরা মনে করি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার ফ্যাসিবাদের ডীপ স্টেট হিসেবে কাজ করেছে।

নবি অবমাননা, গণহত্যা, গুম-খুন, জঙ্গি ট্যাগ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে জেল-জুলুম, অর্থপাচার, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অঘোষিত এজেন্সি, দুর্নীতিবাজদের প্রটেকশন, জঘন্য ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের মাধ্যমে কলাম লিখিয়ে ধর্মীয় অনূভুতিতে আঘাত, রিমান্ডে আলেমদের জিজ্ঞাসাবাদে পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের উপস্থিতি, শাপলার গণহত্যা নিয়ে মিথ্যাচার, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের খুনিকে বাচানো, নারায়নগঞ্জের আলোচিত সাতখুন ধামাচাপা, দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-আমলা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাফাই গাওয়া সহ হেন কোনো অপরাধ নেই যা এই পত্রিকাগুলো করেনি।

আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ এবং প্রথম আলো-ডেইলি স্টার একটি আরেকটির পরিপূরক। বিগত ১৫ বছরে যত গণহত্যা, গুম-মামলা হয়েছে তার জন্য শেখ হাসিনা যতটা দায়ী, এই পত্রিকাগুলো ঠিক ততটুকুই দায়ী। তিন মেয়াদের সরকারে যতবারই শেখ হাসিনা সংকটে পড়েছে ততবারই উক্ত পত্রিকা নামী ভারতীয় পেইড প্রতিষ্ঠানগুলো ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হয়েছে শেখ হাসিনার পাশে।

জঙ্গি নাটক সাজিয়ে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক আলেমসমাজ এবং সাধারণ ইসলামপন্থীদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গং। ছাত্রজনতার তাজা রক্তে ফ্যাসিস্ট রেজিম পতিত হওয়ার পরও এমন ভয়ংকর সন্ত্রাসী প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে দেশে বেমালুম থেকে গিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দিনদিন এগিয়ে যাচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টাররা থেকে যাওয়া মানে শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়ানো এবং অগণিত ছাত্রজনতার তাজা রক্তের সাথে গাদ্দারি করার শামিল।

সুতরাং রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি হচ্ছে, প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মতো ভারতীয় পেইড প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন বাতিল পূর্বক দ্রুত নিষিদ্ধ করতঃ বিচারের মুখোমুখি করে ভবিষ্যতে এমন জীবন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অন্তরায় নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশকে কলঙ্ক মুক্ত করতে হবে। অন্যথায় আমরা যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন করে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’

নাহিন শিকদার, চট্টগ্রাম
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত