সুদানে গত কয়েক মাস যাবত মসজিদ ও কুরআন শিক্ষার কেন্দ্রগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে আধা সামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ)। সেই সাথে অনেক মসজিদকে নিজেদের অস্ত্রাগার এবং সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে আরএসএফ।
সাম্প্রতিক সময়ে সুদানের রাজধানী খার্তুম, ওয়াদি আল জাজিরা, ওমদুরমান, বাহরি এবং দারফুরসহ বিভিন্ন এলাকার আরএসএফের গোলাবর্ষণে বহু মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি করেছে আতঙ্কের পরিবেশ। স্থানীয়রা জানান, হামলার ফলে প্রাণ হারিয়েছেন বহু ইমাম-মুসল্লি। সেই সঙ্গে আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে অনেক মসজিদ।
সুদানের মসজিদে আরএসএফের হামলার দুটি চিত্র
এক. সুদানের অন্যতম রাজ্য দারফুরের উত্তরে অবস্থিত একটি শহর ফাশার। সম্প্রতি শহরটির ইসলামিক ওয়াকফ সংস্থার পরিচালক আদম জাকারিয়া জানান, আরএসএফের হামলায় সম্প্রতি শুধু ফাশারেই তিন ইমামসহ বহু মুসল্লি নিহত হয়েছেন। আদম জাকারিয়া বলেন, ‘মসজিদগুলো সবসময় শান্তি ও সামাজিক সংহতির প্রতীক থাকলেও এখন সেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ফাশারের ১২৪টি জামে মসজিদ এবং ৯৫টি মক্তবের মধ্যে ১০টি মসজিদ আরএসএফের হামলায় পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
দুই. সুদানের রাজধানী খার্তুমের উত্তরে অবস্থিত এলাকা বাহরি। এলাকাটির স্থানীয় কমিটির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরএসএফের হামলায় সেখানকার এক মসজিদেই নিহত হয়েছে ২০ জনেরও বেশি মানুষ। আহতও হয়েছে অনেক।
মসজিদে শুধু হামলাই নয়। যেসব এলাকায় আরএসএফের দখল রয়েছে, সেখানকার মসজিদগুলোকে লুট করে সামরিক ক্যাম্প হিসেবেও ব্যবহার করছে আরএসএফ।
চলছে শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে হামলা
এদিকে মসজিদের পাশাপাশি কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও হামলা চালাচ্ছে আরএসএফ। সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের শহর ফাশারে একটি কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রে গোলাবর্ষণ করে একই পরিবারের ১২ শিশুকে আহত করাসহ ৮জন শিশুকে হত্যা করে। এছাড়া তাদের হামলায় ফজরের নামাজ চলাকালে এক মসজিদে একজন ব্যক্তি নিহত ও ৭জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আরএসএফের এসব হামলার ফলে সুদানে মুসলিমদের ধর্মীয় স্থানগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা আর আতঙ্ক দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ায় সমাজের ঐক্য ও স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের দাবি
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সচেতন মহল বলছে, আরএসএফের এসব হামলা কেবল মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়; বরং এটি সামগ্রিক সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। তাই আরএসএফের এই ধরনের হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সূত্র: আল জাজিরা