১৯৯৩ সাল। এই বছর নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মাঝে স্বাক্ষরিত হয় একটি চুক্তি। আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসে যেটা ‘অসলো চুক্তি’ নামে পরিচিত।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সম্পর্কের ইতিহাসের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তিতে ফিলিস্তিনি প্রশাসন ও ইসরায়েলের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ‘প্যারিস প্রোটোকল’ নামে একটি ধারাও স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির অংশ হিসেবে স্বাক্ষরিত এই প্রোটোকলে মূলত ফিলিস্তিনিদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ১৯৯৯ সালে এই ‘প্যারিস প্রটোকল’ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এখনো কার্যকর রয়েছে এই প্রটোকল। ফলে ফিলিস্তিনের অর্থনীতির ওপর তৈরি হচ্ছে নানা সীমাবদ্ধতা।
প্যারিস প্রোটোকলের মূল শর্তাবলী
ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা তৈরির পিছনে দায়ী মূলত প্যারিস প্রটোকলের শর্তাবলী। শর্তগুলো হল:
১. আমদানি নিয়ন্ত্রণ: ফিলিস্তিনি প্রশাসন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানি করতে পারে, যা তাদের উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে।
২. পানির সরবরাহ সীমিত: এই শর্তের আওতায় ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব জমি থেকেও পানির প্রাপ্যতা সীমিত করা হয়েছে, যা বর্তমানে পানীয় পানের জন্যও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রোটোকলের আরো একটি অন্ধকার দিক
প্যারিস প্রোটোকলের আরো কয়েকটি সমস্যা হলো:
১. ফিলিস্তিন সরকারের কাস্টমস বিভাগের ওপরও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে ইসরায়েলের। এক্ষেত্রে ইসরায়েল সাধারণত ফিলিস্তিনের কাস্টমস বিভাগের সকল কর নিজেরা গ্রহণপূর্বক একটি ‘সমন্বয় অর্থ’ ফিলিস্তিনি প্রশাসনকে দিয়ে থাকে। তবে কোনো হিসাব বা বিস্তারিত পরিসংখ্যান দেয় না।
২. আয়ের প্রধান উৎসে ইসরায়েলের প্রভাব: বর্তমানে ফিলিস্তিনি প্রশাসনের আয়ের ৬৮% এই সমন্বয় অর্থ থেকে আসে, যা তাদের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি বাণিজ্যে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ
প্যারিস প্রোটোকলের ক্ষমতাবলে ফিলিস্তিনের আমদানি-রপ্তানির বড় অংশই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ৮৮% রপ্তানি এবং ৫৪-৫৭% আমদানিতে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে। এর ফলে ফিলিস্তিনি অর্থনীতি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আয় ও আর্থিক সংকট
উল্লেখ্য, প্রথম দিকে ফিলিস্তিনি প্রশাসনের আয়ের ৫০-৬০% আসত বিদেশি সাহায্য থেকে। যা মূলত ইউরোপ এবং আরব দেশগুলো দিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সাহায্যের পরিমাণ কমে ২০% এর নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে ফিলিস্তিন সরকারের বাৎসরিক বাজেট প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার হলেও আয় কমে যাওয়ায় তারা আর্থিক সংকটে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
প্যারিস প্রোটকল থেকে এই ইসরায়েলের এই অবাধ সুযোগ গ্রহণ প্রসঙ্গে হেব্রন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মাজদি আল জাবরি বলেন, ‘প্যারিস প্রোটোকল ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর চুক্তি। কারণ, এটি তাদের (ফিলিস্তিন) অর্থনৈতিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। এই প্রটোকল ফিলিস্তিনের অর্থনীতি বাড়তে বা উন্নতি করতে দেয় না।’
সূত্র : আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link