নিউজনেস্ট

গোপনে আরব রাষ্ট্রের নাগরিকদের মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল

গোপনে আরব রাষ্ট্রের নাগরিকদের মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল
গোপনে আরব রাষ্ট্রের নাগরিকদের মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল। ছবি: আল জাজিরা

৭ই অক্টোবর ২০২৩-এ ‘আল আকসা ফ্লাড’ অভিযানের পর থেকে ইসরায়েল আরব দেশগুলোর গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান বা তার সহযোগী সংস্থাগুলো যাতে কোন পাল্টা আঘাত হানতে না পারে সেজন্য নিজেদের প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে নাকি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এমন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ডের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষত: লেবানন, জর্ডান, সিরিয়া ও ইরাকের সাধারণ মানুষ তাদের ফোনে লোকেশন বিভ্রাটের শিকার হচ্ছেন। এসব দেশের নাগরিকদের অভিযোগ, তদের দেশের জিপিএস ইসরায়েল নিয়ন্ত্রন করায় ফোনে তাদের স্বাভাবিক অবস্থান বিভিন্ন সামরিক স্থাপনাগুলোয় দেখানো হচ্ছে। যেমন জর্ডানের উত্তরাঞ্চলের নাগরিকরা নিজেদের অবস্থানকে হিজবুল্লাহ’র সামরিক ঘাঁটি কিংবা বৈরুত বিমানবন্দরের নিকটে দেখতে পাচ্ছেন। অন্যদিকে লেবাননের নাগরিকরা নিজেদের অবস্থানকে ফিলিস্তিনের রাফাহয় দেখতে পাচ্ছেন।

কিভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে ইসরায়েল?

ইসরায়েল তাদের বিভ্রান্তিকর এই কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যার মধ্যে রয়েছে জ্যামার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, স্যাটেলাইট ও লেজার প্রযুক্তি অন্যতম। এই সরঞ্জামগুলো থেকে শক্তিশালী ফলস সিগন্যাল ছড়ানো হয়। যা পরে আরব রাষ্ট্রগুলোর জিপিএস সিগন্যালের সঙ্গে মিশে যায়। এতে আরব রাষ্ট্রগুলোর জিপিএস সিগন্যালে পরিবর্তন কিংবা বিঘ্নতা ঘটে থাকে। এছাড়া আরও শক্তিশালী সরঞ্জামের মাধ্যমে আরব রাষ্ট্রগুলোর স্যাটেলাইট সংকেতের নকল তৈরি করে মিথ্যা তথ্যও পাঠানো হচ্ছে। যার ফলে সাধারণ জিপিএস রিসিভারগুলোর স্যাটেলাইটের সিগন্যালগুলো বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর কি কি ক্ষতি হচ্ছে?

এই জিপিএস বিভ্রাটের কারণে প্রতিরোধ বাহিনীর ছোঁড়া অনেক ড্রোন আরব দেশগুলোয় আঘাত হানছে। সেই সাথে আরব দেশগুলোর সাধারণ বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটা ছাড়াও, যানবাহন চলাচলকেও বিঘ্নিত করছে। আরব দেশগুলোর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উৎপাদন কার্যক্রমেও বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি খাতে বড়ধরণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা

  • ইরাক থেকে প্রেরিত ক্ষেপণাস্ত্র লেবানন এবং মিশরের সিনাই অঞ্চলে আঘাত করেছে।
  • অক্টোবরের শেষে, প্রতিরোধ বাহিনীর তিনটি ড্রোন ইসরায়েলে না গিয়ে জর্ডানের উত্তরাঞ্চলে পতনের ঘটনা ঘটেছে।
  • মার্চ মাস থেকে লেবানন পাইলটদের স্থলভিত্তিক নেভিগেশন ব্যবস্থায় নির্ভর করার নির্দেশ দিয়েছে এবং জিপিএস সংকেত উপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।

যে কারণে ইসরায়েলের এমন কাজ অবৈধ

যদিও বিশ্বে অনুমতি ছাড়া কোন দেশের জিপিএসে বিভ্রাট তৈরি বা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত স্পষ্ট কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি নেই, তবুও এমন কর্মকাণ্ডকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়। জেনেভা কনভেনশনসহ একাধিক চুক্তি অসামরিক নাগরিকদের ওপর অপ্রয়োজনীয় বা অযৌক্তিক ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে বলে। ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ড জেনেভার সেই নীতিমালার স্পষ্ট পরিপন্থী।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. ইমরান সালিমের মতে, এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংকেত বিভ্রাট সৃষ্টি করা শুধুমাত্র একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নয় বরং এটিও এক ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত