নিউজনেস্ট

জেরুজালেম নিয়ে কি আগের পথেই হাঁটবেন ট্রাম্প?

জেরুজালেম নিয়ে কি আগের পথেই হাঁটবেন ট্রাম্প?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: আল জাজিরা

প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শেষ হল মার্কিন নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনে আবারও ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বচিত হওয়ায় হাজার প্রশ্নের সাথে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা হল ফিলিস্তিন ইস্যু। কারণ, ফের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আগের মেয়াদে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে নিয়েছিলেন একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। পূর্বের মেয়াদে ফিলিস্তিন নিয়ে যেসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প তা নিম্নরূপ:

১. জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা

২০১৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার মত অত্যন্ত গর্হিত একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে ট্রাম্প ও তার প্রশাসন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সঙ্কট আরও জটিল হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশই সেসময় এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং এটি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে ব্যাহত করতে পারে বলে সতর্ক করে।

২. আমেরিকান দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার পর ২০১৮ সালের ১৪ই মে আমেরিকান দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরিত করারও ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এই ঘোষণা নিয়ে তখন ব্যাপক আপত্তি আসলে ট্রাম্প বলেছিলেন, দূতাবাস সরানোর মধ্যে ‘জেরুজালেমকে রাজধানী বানানোর বিষয়টির বাদ দেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু ট্রাম্পের সেই পদক্ষেপও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত হয় এবং ফিলিস্তিন সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়।

৩. জেরুজালেমের হাসপাতালগুলোতে আর্থিক সহায়তা বন্ধ

দূতাবাস কাণ্ডের পর ২০১৮ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জেরুজালেমের ছয়টি ফিলিস্তিনি হাসপাতালের জন্য বরাদ্দকৃত ২৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা স্থগিত করে। হাসপাতালগুলো পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে আগত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিল। সহায়তা বন্ধের সেই সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য চরম দুঃখজনক আঘাত হিসেবে দেখা হয়।

৪. আমেরিকান কনস্যুলেটকে দূতাবাসের সঙ্গে একীভূতকরণ

২০১৮ সালের ১৮ই অক্টোবর ট্রাম্প প্রশাসন জেরুজালেমে অবস্থিত আমেরিকান কনস্যুলেটকে দূতাবাসের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দেয়। এদিকে ঐতিহ্যগতভাবে ওই কনস্যুলেট ফিলিস্তিনিদের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করত। কনস্যুলেটকে দূতাবাসের সঙ্গে একীভূত করার ফলে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য আমেরিকার কূটনৈতিক সংযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, আমেরিকান কনস্যুলেট ভবনকে দূতাবাসের অন্তর্ভূক্ত করে ফেলায় ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে পড়েছিল।

৫. পাসপোর্টে জন্মস্থানের জায়গায় জেরুজালেমের’ পরিবর্তে ইসরায়েলএর ব্যবহার

২০২০ সালের ৩০শে অক্টোবর আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জেরুজালেমে জন্মগ্রহণকারী আমেরিকানরা তাদের পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে ইসরায়েল বা জেরুজালেম যেকোন একটি নির্ধারণ করতে পারবেন। এর পরপরই ৩১শে অক্টোবর প্রথম একটি আমেরিকান পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে ‘ইসরায়েল’ উল্লেখ করা হয়। তাৎক্ষনিকভাবেই ওই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। কেননা এটি ছিল পরোক্ষভাবে  জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্তের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান।

এসব বিতর্কের ৪ বছর পর ট্রাম্প ফের নির্বাচিত হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে এখন কি তাহলে আবারও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পূর্বের মতোই কার্যকলাপ শুরু করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত