নিউজনেস্ট

প্রতি মুহূর্তে আমি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি: ফিলিস্তিনি বন্দী

ফিলিস্তিনি বন্দীদের উপর ইসরায়েলর নির্যাতনের করুণ কাহিনী
ফিলিস্তিনি বন্দীদের উপর ইসরায়েলর নির্যাতনের একটি করুণ চিত্র। ছবি; আল জাজিরা

দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের নির্যাতন নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক এমন কিছু ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে যা এই অত্যাচারের ভয়াবহ রূপকে সামনে নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলি কারাগারে রোগ ছড়িয়ে, চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে এব জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো কেড়ে নিয়ে কীভাবে বন্দীদের ওপর এই নির্যাতন চলছে, তারই কিছু হৃদয়বিদারক বর্ণনা উঠে এসেছে ফিলিস্তিনি বন্দীদের কণ্ঠ থেকে।

নয়া পন্থায় নির্যাতন

মার্চ ২০২৪-এ আটক হওয়া এক ফিলিস্তিনি জানান, তাকে গাজা শহরের শিফা হাসপাতাল থেকে ইসরায়েল গ্রেফতার করে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইসরায়েলের কুখ্যাত নেগেভ কারাগারে। আর সেখানেই তার নতুন দুঃস্বপ্নের শুরু। বন্দী ফিলিস্তনি জানান, ‘প্রথম দিন থেকেই আমাকে মারধর করা শুরু হয়। পাশাপাশি কুকুর দিয়ে ভীতি প্রদর্শনসহ নির্মমভাবে প্রহারের মাধ্যমে আমার পাঁজর ভেঙে দেওয়া হয়। আর এখন মারধর কমলেও, শরীরের ব্যথা-বেদনায় আমার মানসিক কষ্ট আরো বেড়েছে।’

বন্দী ফিলিস্তিনি আরও জানান, শত শত বন্দী স্ক্যাবিস বা গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত, যা তাদের জীবনে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিন্তু ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষ তাদের রোগ মুক্তির কোনো ব্যবস্থা তো করছেই না; উল্টো এই রোগকে কারা কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদেরকে আরও কষ্ট দেওয়ার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ফিলিস্তিনি বন্দীদের অভিযোগ, তাদেরকে দীর্ঘদিন অপরিষ্কার কাপড় পরতে বাধ্য করা হচ্ছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাছাড়া ইসরায়েল বন্দীদের অসুস্থতাকেই নির্যাতনের আরেকটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

এদিকে ফিলিস্তিনি বন্দী ক্লাব ও বন্দী বিষয়ক কমিশনও ইসরায়েলের কুখ্যাত নেগেভ কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে স্ক্যাবিস রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে। এবং ইসরায়েলি কারা কতৃপক্ষের বন্দীদের চিকিৎসা না দেওয়ার বিষয়টিও জানিয়েছে তারা।

অন্যদিকে শুধু চিকিৎসা নয়, জীবনের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত ফিলিস্তিনের বন্দীরা। বন্দী এক ফিলিস্তিনি জানান, ‘ছয় মাস ধরে আমি একই পোশাক পরে আছি। প্রতিদিন ভোরে আমাদের চাদর ও গদি কেড়ে নেওয়া হয় এবং অনেক রাতে তা ফিরিয়ে দেয়। ঠান্ডা আর অনাহারের মধ্যে আমাদের জীবন কষ্টকর হয়ে উঠেছে।’ শীত ও ক্ষুধা আমাদের প্রতিদিন আরও অসহায় করে তুলছে।

শ্রবণশক্তিহীন এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ফিলিস্তিনের আরেক বয়স্ক বন্দীর অবস্থা আরও করুণ। সেই বন্দী বলেন, ‘ক্ষুধা আর ঠান্ডার জন্য আমি ঘুমাতে পারি না। কারাগারের প্রতিটা মুহূর্তে আমি যেন ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি সত্যিই আর সহ্য করতে পারছি না।’

উল্লেখ্য, শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি মানসিক চাপ ও অবহেলা ফিলিস্তিনি বন্দিদের আরও অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের বন্দী ক্লাব জানিয়েছে, কারাগারে শুধু শারীরিক নির্যাতনই হয় না; মানসিক নির্যাতনও করা হয়। আর এখন সেই নির্যাতনের নতুন পদ্ধতি হিসেবে যোগ হয়েছে গুটি বসন্ত রোগের চিকিৎসা না দেওয়া। এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনি বন্দীদের খাবার, চিকিৎসা এবং শারীরিক অবস্থা ইসরায়েলি কারাগারে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে যেন তারা ক্রমাগত অমানবিক দুর্ভোগের মধ্যে থাকে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো যদিও এই ধরনের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর শারীরিক আঘাত থেকেও আরও ভয়ংকর অদৃশ্য নির্যাতন চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ তারা নিতে পারেনি। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের নির্যাতন বন্দীদের শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মানসিকভাবে অসহায় করে তোলে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত