গাজা উপত্যকায় শীত মানেই কঠিন এক সংগ্রামের সূচনা। শীতল হাওয়া আর মেঘলা আকাশের নিচে, প্রায় প্রতিটি পরিবারই খুঁজে ফেরে উষ্ণতার কোন না কোন উপায়। তার উপর ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রভাব আর দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের কারণে, গাজাবাসীদের সেই সংগ্রাম দিনে দিনে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের কারণে এ বছর খান ইউনিসের ফিলিস্তিনিরা শীত কাটাতে বেছে নিয়েছে কয়লা ব্যবহারের প্রাচীন পদ্ধতি।
গরম থাকার জন্য কয়লার ব্যবহার
জ্বালানি ও রান্নার গ্যাসের অভাব এবং ইসরায়েলের ধারাবাহিক গোলাবর্ষণের মাঝেই কয়লা উৎপাদনে দিনরাত পরিশ্রম করছে গাজার খান ইউনিস শহরের মানুষ। কয়লার গন্ধে ভরে উঠছে খান ইউনিসের অলিগলি। কারণ, শীত থেকে বাঁচতে খান ইউনিসের বাসিন্দাদের কাছে কয়লাই এখন একমাত্র ভরসা।
কিন্তু কয়লা উৎপাদনে কাঠ সংগ্রহের প্রক্রিয়াটিও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কয়লা উৎপাদনের জন্য খান ইউনিসের পূর্বদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর ক্যাম্পের নিকটবর্তী কৃষিজমি থেকে কাঠ সংগ্রহ করতে হয়। আর জয়তুন গাছে ভরা সেসব জমি আগেই দখলদার বাহিনী ধ্বংস করে ফেলেছিল। এদিকে বিপজ্জনক এই কাজ করা অনেকেই কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, কাঠ সংগ্রহের জন্য সেইসব জমিগুলোতে যাতায়াত অত্যন্ত বিপজ্জনক, যা প্রায়শই জীবনের ঝুঁকি তৈরি করে।
এদিকে যুদ্ধের প্রভাবে উপার্জনের পথ এবং সঞ্চয় হারিয়ে গাজাবাসীদের পক্ষে কয়লা কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের আগে যে কয়লার মূল্য ছিল ৫ শেকেল বা ২ ডলারের কম, বর্তমানে সেই দাম পৌঁছে গেছে প্রায় ২০ শেকেল তথা ৬ ডলার থেকেও বেশি। এই অবস্থায় অনেকের পক্ষেই প্রয়োজনীয় জ্বালানি সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের এই সময়ে গাজায় দেখা যাচ্ছে নতুন এক দৃশ্যপট। গাজার শিশুরা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারযোগ্য যা কিছু পায়, তা সংগ্রহ করছে। কাঠ, পুরনো কাপড়, কার্টুন কিংবা প্লাস্টিক যা পায়, তা দিয়েই অস্থায়ী শরণার্থী ক্যাম্পে কাদামাটি দিয়ে বানানো চুলায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে।