সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একটি জাতির পরিচয়, স্মৃতি এবং সভ্যতার ভিত্তি। এটি শুধুই ভবন কিংবা নিদর্শন নয়, বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে আনা ইতিহাসের গল্প। কিন্তু যখন সেই ইতিহাসই হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে, তখন শুধু একটি জাতির ক্ষতি হয় না; সমগ্র মানবজাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসরায়েলি হামলায় লেবাননের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো এমনই এক নির্মম বাস্তবতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূর্যের শহর বালবেক: একটি হারিয়ে যাওয়া গৌরব
লেবাননের বালবেক, যাকে ‘সূর্যের শহর’ নামে অভিহিত করা হয়, রোমান স্থাপত্যের এক অতুলনীয় নিদর্শন। এখানে রয়েছে জুপিটার এবং বাকাসের মন্দির। ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এই শহরটি ইসরায়েলি বোমার আঘাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। একটি ওসমানীয় ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, আর পুরো শহর ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
টাইর: সমুদ্রের রানীর কান্না
টাইর শহর, যা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শহর, টাইর শহরটি ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং কৌশলগত অবস্থানের জন্য বিখ্যাত। অশকালনের মন্দির, প্রাচীন বন্দরসহ শহরটি ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত হলেও ইসরায়েলি বোমা তা রক্ষা করতে পারেনি। একাধিক বিমান হামলায় টাইরের ঐতিহ্যবাহী এলাকা এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
বৈরুতের স্মৃতি আগুনে পুড়ছে
বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চল এবং নাবাতিয়া বাজার ইসরায়েলি হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। শতবর্ষ প্রাচীন এই বাজারটি ধ্বংস হয়েছে একের পর এক আক্রমণে। শুধু তাই নয়, ‘ট্র্যাডিশন ফর পিস’ সংস্থার তথ্যে দেখা যায়, বৈরুতের ধর্মীয় ভবন ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলোও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
উপাসনালয় এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ওপর আঘাত
ইসরায়েলি হামলা থেকে রেহাই পায়নি ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোও। সেন্ট জর্জ গির্জা, ওসমানীয় যুগের কাফর টেবনিত মসজিদসহ আরও অনেক উপাসনালয় ধ্বংস হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের ঐতিহাসিক বসতিগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শতাব্দী-প্রাচীন ঘরবাড়ি, যা প্রজন্মের স্মৃতির ধারক, ধ্বংস হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার অভাবে।
সংস্কৃতি ধ্বংস: কাগজে কলমে রক্ষার প্রতিশ্রুতি
১৯৫৪ সালের হেগ কনভেনশন সাংস্কৃতিক সম্পদ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখা যায় না। প্রতিটি জাতির সাংস্কৃতিক সম্পদ বিশ্ব সংস্কৃতির অঙ্গ। তাই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা মানবজাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
লেবাননের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর ইসরায়েলের আক্রমণ শুধু একটি জাতির নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এই ঐতিহ্যগুলোর ধ্বংস বিশ্ব ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। আজ প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী পদক্ষেপ, যেন ইতিহাসের এই ধারক-বাহকদের রক্ষা করা যায়। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রক্ষায় আমাদের সকলের সচেতনতা এবং উদ্যোগ প্রয়োজন।
সূত্র: আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link