সম্প্রতি পাকিস্তানের করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি পণ্যবাহী জাহাজ নোঙর করেছে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল, যা ঐতিহাসিক এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সরাসরি সমুদ্রপথ চালু হওয়ার ফলে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি এতে যেমন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের অগ্রগতি হচ্ছে তেমনই নিরাপত্তা শঙ্কায় মহা উদ্বেগে পরেছে ভারত।
বাণিজ্যিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত
দুবাই-ভিত্তিক একটি শিপিং সংস্থা এই নতুন রুটটি চালু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজটি মূলত পাকিস্তান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পণ্য নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কাঁচামাল এবং মৌলিক খাদ্যসামগ্রী ছিল। আগে পাকিস্তানি পণ্য বাংলাদেশে আসতে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া হয়ে আসত। তবে সরাসরি রুট চালু হওয়ায় পরিবহন খরচ ও সময় কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের উষ্ণতা
সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানি পণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়ে একাধিক উদ্যোগের ইঙ্গিত মিলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি বড় পদক্ষেপ।
ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ ঘটনাকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে। ভারতের জন্য এটি কেবল বাণিজ্য নয়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। বিশেষত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি সংযোগ দক্ষিণ এশিয়ার জটিল সম্পর্কের সমীকরণে যেন নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ইতিহাসের পটভূমি ও ভবিষ্যতের দিশা
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে ঠাণ্ডা ছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে পাকিস্তানি পণ্যের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক পরিবর্তনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নতুন সংযোগ দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও এটি শুধু অর্থনীতিই নয়, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকেও নজর রাখার বিষয় হয়ে উঠেছে।